শিশু পালন ও উন্নয়নে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে পারে দেশগুলো। ইন্টারনেটের কল্যাণে এ বিনিময় অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। কয়েকটি সাংস্কৃতিক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু পালনের চর্চাটি অধিকাংশ সময় স্থানীয় অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। চাইল্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি ব্লগ অবলম্বনে এ বিষয়ের নানা দিক জেনে নিতে পারেন।
বিভিন্ন সংস্কৃতিতে শিশু পালন নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ‘পিএসি’ প্রকল্প নামে পরিচিত। এটি মূলত চীন, কলম্বিয়া, ইতালি, জর্ডান, কেনিয়া, ফিলিপাইন, সুইডেন, থাইল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রÑএ ৯টি দেশের ১৩টি সংস্কৃতির বাবা-মা ও সন্তানের ওপর করা দীর্ঘমেয়াদি একটি গবেষণার ফল।
সংস্কৃতির ভিন্নতা
গবেষণায় দেখা গেছে, সবকটি সংস্কৃতিতেই বাবা-মায়ের আন্তরিকতা, ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা শিশু বিকাশের জন্য ইতিবাচক। তবে সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে শিশুর প্রতি মা-বাবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের ধরনে ভিন্নতা আছে। কিছু সংস্কৃতিতে মা-বাবা শিশুদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন তাদের জড়িয়ে ধরে, চুমু খেয়ে। কেউবা সন্তানের জন্য ভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে ভালোবাসার জানান দেন। আবার শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণও সংস্কৃতিভেদে আলাদা হয়ে থাকে। কেনিয়াতে বাবা-মায়ের অনুগত ও নিয়ন্ত্রিত সন্তানরা অধিক ভালোবাসা ও সাফল্য লাভ করে। সুইডেনসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ চিত্রটা ভিন্ন। এখানে অপেক্ষাকৃত কম অনুগত ও কম নিয়ন্ত্রিত সন্তানরাই বেশি সফলতা ও ভালোবাসা পায়।
যা ভালো তা-ই মন্দ
এক সংস্কৃতিতে সন্তানের প্রতি মা-বাবার ব্যবহার অন্য সংস্কৃতির সন্তানদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের কথাই ধরুন। এখানে শিশু অবস্থা থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও সন্তান সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবার অনুমতি ও পরামর্শ নিয়ে থাকে। কিন্তু ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সন্তানদের ওপর পরিবারের তেমন বিধিনিষেধ থাকে না। তাই হুট করে শিশুদের ওপর বাবা-মায়ের বাধ্যবাধকতা চর্চা শুরু করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বৈশ্বিক প্রভাব
বিশ্বায়নের এ যুগে নানা সংস্কৃতিতে শিশু পালনে রয়েছে ভিন্নতা। যা একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সব সংস্কৃতিতেই শিশু পালন তার ঐতিহ্যের দ্বারা প্রভাবিত। বিশ্বায়নের একটি প্রভাব হচ্ছে, শিশু আশেপাশের সংস্কৃতি ও মিডিয়া দ্বারা অন্য সংস্কৃতির প্রতি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। যা শিশু ও অভিভাবক উভয়কে সমস্যার ফেলতে পারে। ফলে বিশৃঙ্খলা ও সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে পূর্বপুরুষ হতে চলমান নিয়মের মধ্যেও ছেদ ঘটে যায়।
আছে নানা পরিকল্পনা
শিশুদের সামগ্রিক ভালো বিবেচনায় এনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন করা হয়েছে। জাতিসংঘের ‘সাস্টেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’-এর উদ্ভাবন হয়েছে। শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা, দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি ও নির্যাতন থেকে যেন রক্ষা পায়Ñসেদিকে লক্ষ্য রেখে এ আইন করা হয়েছে। অবশ্য এগুলো মূলত উন্নত দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে সব সংস্কৃতিতে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ আমেরিকায় কিছু স্বল্প আয়ের দেশে উত্তর আমেরিকার তুলনায় দ্রুত সময়ে অধীনস্থদের শাস্তি প্রদান নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে এখনও শিশুদের জন্য আইনি সুরক্ষা সেভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। যদিও কেনিয়ার মতো অনুন্নত দেশের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হোমস আইনের আওতায় করপোরাল আইন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ গবেষণা প্রমাণ করে, অধীনস্থদের প্রতি শাস্তি বৃদ্ধি করে শিশুদের আগ্রাসী আচরণ, দুশ্চিন্তা, বিষণœতা বৃদ্ধি করে। শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও সামাজিক কর্মদক্ষতাও হ্রাস করে।
করণীয়
শিশুদের জন্য সঠিক নীতি বাছাই করার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যেগুলো দেশের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা হবে। এর মাধ্যমে শিশুরা সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।
বাবা-মাকে শিশুর আচরণ পরিবর্তনের আগে তার বিশ্বাস ও প্রত্যাশাগুলো শুনতে, বুঝতে হবে। সেক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তনের কাজটি অভিভাবকের জন্য সহজ হবে। তবেই শিশু যে কোনো পরামর্শ ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকে মানিয়ে নিতে পারবে।
গবেষণায় একটি বিষয় পরিষ্কার, নি¤œ আয়ের দেশগুলোই যে শুধু উচ্চ আয়ের দেশগুলোর কাছে শিখবে তা নয়; অনেক সময় উচ্চ আয়ের দেশগুলোকেও শিখতে হয় অন্যদের কাছ থেকে।