নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রধান সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে তুলে দেয়া ১৬৯টি কোম্পানির শেয়ারে ফ্লোর প্রাইস আবার আরোপ এবং বাজার গতিশীল না হওয়া পর্যন্ত উঠছে না ফ্লোর প্রাইস। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এমন আশ্বাসে সূচক ও লেনদেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে। একই সঙ্গে কেনার প্রবণতাও ছিল বেশ ভালো, যে কারণে ফ্লোর প্রাইস না তোলায় পুঁজি হারানোর ভয় কমেছে এবং নতুন তহবিল প্রবেশের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক টানা দুই সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রেখেছে। কারণ ১৬৯টি কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস আবার আরোপ করায় লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করেছে। এছাড়া ফ্লোর প্রাইস পুনঃস্থাপনে পুঁজি হারানোর ভয় কমেছে এবং সুরক্ষা দিচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি হয়েছে এবং বাজারে নতুন তহবিল প্রবেশ করছে। এদিকে দীর্ঘদিন বাজার সংশোধনের ফলে বর্তমানে লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে সপ্তাহজুড়ে বিনিয়োগকারীরা নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগের জন্য দর কমার ও বৃদ্ধির বিষয়টি কাজে লাগিয়েছেন।
তারা আরও জানান, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে তেজিভাব লক্ষ করা গেছে। কারণ বাজার গতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস উঠছে না বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ ইঙ্গিতের ওপর ভিত্তি করে সপ্তাহব্যাপী বাজারে ছিল বিনিয়োগকারীদের উদ্যমী অংশগ্রহণ এবং একই সঙ্গে তারা ক্রয়ের মেজাজে ফিরে এসেছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমে সপ্তাহের শেষ দিন ব্যতীত বাকি কার্যদিবসে সূচকের ধীরে ধীরে উত্থান দেখা গেছে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের এ ক্রমবর্ধমান অংশ নেয়ার সম্ভাবনা ও আস্থা লক্ষ করা গেছে। তাই বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশ নেয়ার মাধ্যমে সামগ্রিক বাজারে প্রাণবন্ত অবস্থা ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৫৮৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৭৯১ কোটি চার লাখ টাকার বা ৪৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৩৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৩৫টির, দর কমেছে ২৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৫টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ১৭টি কোম্পানির শেয়ারের।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৪৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২৬০ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১০ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে ও শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস ৫ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে দুই হাজার ২২৬ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে ও এক হাজার ৩৬২ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। এদিকে সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৪০ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহ শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি আট লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা ৪৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত সপ্তাহে তালিকাভুক্ত ২৭০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১২৩টির, দর কমেছে ১১টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৬টি কোম্পানির। এতে দেখা গেছে, কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে পতনের তুলনায় উত্থান ১১ গুণ বেশি। একটি বাদে বাকি পাঁচ ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৪৫০ দশমিক ১৫ পয়েন্টে। সিএসই৩০ সূচক দশমিক ৩৭ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ৮৯ শতাংশ, সিএসআই সূচক দশমিক ৫৬ শতাংশ ও সিএসই এসএমইএক্স ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৩ হাজার ৩৫২ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৫৯ দশমিক ৯১ পয়েন্টে, এক হাজার ১৬১ দশমিক ২১ পয়েন্টে ও এক হাজার ৬৫৯ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৫০ সূচক দশমিক শূন্য আট শতাংশ কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৩২৩ দশমিক ৯২ পয়েন্টে।