সক্ষমতা যাচাই করে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করুন

আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে অনেক আগেই। কত ধরনের জালিয়াতি-কেলেঙ্কারি সংঘটিত হচ্ছে এ খাতে রয়েছে। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রভৃতি অব্যবস্থাপনার পর নতুন কেলেঙ্কারির খবর আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঋণদানে অনিয়মে ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছে অগ্রণী ব্যাংক।

কয়েকদিন আগে শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে আমরা জেনেছি ‘একই জমি বন্ধক রেখে দুই ব্যাংক থেকে ঋণ’ নেয়ার ঘটনা। জানা যায়, সম্পত্তির মূল কাগজপত্র ছাড়াই ঋণ অনুমোদন করেছে অগ্রণী ব্যাংক। গতকাল ‘স্টাইল ক্র্যাফটকে ঋণ দিতে মরিয়া অগ্রণী ব্যাংক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রমাণ হয় নেতিবাচক খবরে মোটেই বিচলিত নয় ব্যাংকটি। পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুরো বিষয় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে ব্যাংকটি।

স্টাইল ক্র্যাফটকে কয়েকটি শর্তে ঋণ দিতে অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পত্তির মূল দলিল গ্রহণ, রাজউকের অনাপত্তি, পূবালী ব্যাংকের অনাপত্তি, এ কার্যক্রমে জড়িত ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তী বোর্ড সভায় আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তগুলো উপস্থাপন করা।

অগ্রণী ব্যাংকের এক পরিচালকের কথায় যেন অসহায়ত্বই প্রকাশ পেয়েছে। স্টাইল ক্র্যাফটকে ঋণ দেয়ার আলোচনায় তারা অংশ নেননি। ঋণটা ভালো মনে না করায় নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন তারা।

ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের জামানতকৃত সম্পত্তির মূল কাগজপত্র জমা দিতে অতিরিক্ত দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সম্পত্তির মূল কাগজ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ঋণ বিতরণের শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে ব্যাংক।

ব্যাংকটি বিষয়টি চেপে যাওয়ায় প্রভাবশালী মহল এতে জড়িত বলেই প্রতীয়মান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার শর্ত পরিপলিত না হওয়ায় তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কিন্তু এটি বলা যায়, ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা যাচাই ব্যতিরেকেই ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকটি।

আমরা মনে করি, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেয়া শর্তাবলি পরিপালিত হয়নি বলেই লুকোচাপার চেষ্টা। ব্যাংক এমডির বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার নাম পরিবর্তনে পর্ষদের অনুমতিক্রমে দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই মাস লাগবে কেন? বোর্ড মেমো গেলে দুই মাসের বিষয়টা বাংলাদেশ ব্যাংক জানতে পারবে।’

ব্যাংক কর্মীদের সংশ্লেষ ছাড়া কোনো অনিয়ম সংঘটিত হতে পারে না। এখন ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে অনলাইনে, ম্যানুয়ালি নয়। তাৎক্ষণিক যে কোনো তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব। কেন বোর্ড মেমো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে দুই মাস লাগবে। বড় ঋণের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাৎক্ষণিক জানালে ঋণ দানে হয়তো অনিয়ম থাকবে না। এখানেই প্রশ্ন, সক্ষমতা যাচাই করে ঋণ দেয়া হচ্ছে কি না। ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই করে ঋণ বিতরণ করছে কিনা, তা নিশ্চিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকিও জরুরি।