সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি এখন নিজেই রুগ্ণ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। দেখার যেন কেউ নেই। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ১৪ বছর ধরে ৫০ জন নিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতালটি চলছে। চিকিৎসকের ৩১টি পদ থাকলে হাসপাতালে রয়েছেন মাত্র ১৫ জন চিকিৎসক। চিকিৎসা সেবা চালু রাখতে কয়েকজন চিকিৎসককে জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে এনে যুক্ত করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। এরপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রাদার ও নার্স জরুরি বিভাগে সেবা দেন। হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতিও নেই।

শিশু বিভাগে তাপমাত্রা মাপার জন্য নেই থার্মোমিটার। কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স-ডাক্তাররা থার্মোমিটার কিনে আনার জন্য রোগীদের চাপ দেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এক্স-রে ও প্যাথলজিসহ যেসব যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো বেশ পুরোনো।

হাসপাতালে নাক, কান, গলা, চোখ, ব্রেন, কিডনি ও বক্ষব্যাধিসহ আরও অনেক বিভাগে চিকিৎসক নেই। জরুরি বিভাগে ৩ জন চিকিৎসকের জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন। হাসপাতালে আইসিইউ ও সিসিইউ নেই। হƒদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এখানে সিটি স্ক্যানও নেই। তাই এসব রোগীকে ঢাকায় রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শাখাওয়াত হোসেন জানান, চোখ, নাক, কান, গলা বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। এমন রোগী এলে কোনো সেবা দেয়া যাচ্ছে না। এক্স-রে মেশিনসহ যেসব মেশিন রয়েছে, সেগুলো পুরোনো আমলের। ডিজিটাল কোনো মেশিন এখানে নেই।

এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। অ্যাম্বুলেন্স সেবার নামে চলে প্রতারণা। ডাক্তার দেখিয়ে বের হলেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে চলে দালালদের টানাটানি। তিনটি অ্যাম্ব্যুলেন্স ও দু’জন চালক আছেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স নিতে গেলে রোগীর স্বজনদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ এখন নিত্যদিনের। ডাক্তারের নির্দেশনা থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হয় না। ফলে চালকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। এই অক্সিজেন না দেয়ার কারণে খোরশেদা বেগম নামে এক রোগীকে ঢাকায় নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মারা গেলে রোগীর স্বজনরা চালক জসিমকে দায়ী করে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে অকপট স্বীকারোক্তি দেন অ্যাম্বুলেন্স চালক জসিম। তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স মেরামত করতে হয়েছে, তাই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়েছি।’

জানা গেছে, হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নতুন ভবনটি শিগগির উদ্বোধন হচ্ছে না। ভবনটি উদ্বোধন হলে হাসপাতালটি মোট ২৫০ শয্যায় উন্নীত হবে।