সড়কে নির্ধারিত গতিসীমা পরিপালন হোক

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ যানবাহনের বেপরোয়া গতি। এই গতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অনেক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সে জন্য কোন সড়কে কোন ধরনের যানবাহনের গতি কেমন হবে, সে বিষয়টি নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক বিভাগ। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন কতটা হবে, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এমন পরিস্থিতিতে জনমানুষের প্রত্যাশা গতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ যেন বাস্তবায়ন হয়।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘যানবাহনের গতি বেঁধে দিল সড়ক বিভাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশব্যাপী উন্নত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দ্রুতগতির যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রায়ই অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মোটরযানের অতিরিক্ত গতি ও বেপরোয়াভাবে মোটরযান চালানো। দ্রুতগতির কারণে আঘাতের মাত্রাও হয় অত্যধিক। ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই নতুন এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।

গতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এটি বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে সে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের সব উন্নত দেশেই সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোড়ে মাড়ে ক্যামেরা বসানো আছে। সেই ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহনের গতি মনিটর করা হয়। এতে যদি পরিলক্ষিত হয় যে কোনো গাড়ি অতিরিক্ত গতিতে চলছে, তাহলে সেই গাড়ির চালককে জরিমানা করা হয়। এমনকি চালকের লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটা হয়।

লন্ডনেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শহরে যাতে গাড়ির বাড়তি চাপ সৃষ্টি না হয়, সে জন্য অন্য রাজ্য বা লন্ডনের বাইরে নিবন্ধিত গাড়ি লন্ডন শহরে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এভাবে বিশ্বের সব উন্নত শহরেই সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা বিধান করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে এখনও সড়কে যানবাহন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখনও সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রিত হয় ট্রাফিক পুলিশের হাতে ইশারায়। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণার সঙ্গে কোনোভাবেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কাজেই গতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে আধুনিক যানবাহন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সংযোজন করতে হবে।

ঢাকা শহরে বিপুলসংখ্যক ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করে। কথিত আছে যে, পুলিশ সদস্যরা উৎকোচের বিনিময়ে এসব মানহীন বাস সড়কে চালানোর বিষয়ে সহায়তা করেন। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের মতো সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।