পাঠকের চিঠি

সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক

মানুষ স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে, মনের আঙ্গিনায় প্রতিদিন স্বপ্ন সাজায়। প্রতিদিন স্বপ্ন দেখে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিছু স্বপ্ন আচমকা থমকে যায়, মুহূর্তে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কত স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যায় ব্যস্ত সড়কে। মানুষের স্বপ্ন পূরণের প্রধান অন্তরায় যেন সড়ক  দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা খুব ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে, এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা। জীবনচক্রে কত মানুষকে যে ভাগ্যের ফেরে সড়কে জীবন জলাঞ্জলি দিতে হয়, পরিবারে নেমে আসে কালো অধ্যায়। দিনের পর দিন সড়ক দুর্ঘটনা কতটা ঘাতক হয়ে উঠেছে তা  বোঝার জন্য সর্বশেষ নভেম্বর মাসের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।

দেশে গত নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৬৩টি। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫৪ জন এবং আহত সংখ্যা নিছক কম নয়, আহত হয়েছেন ৭৪৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৭৮ জন ও শিশু ৭১। বলা হয়ে থাকে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের সঠিক পরিচর্যা করলে স্বপ্ন দেখালে এক সময় দেশের মাথা হতে পারে। দুর্দিনে কাণ্ডারি হয়ে ধরতে পারে দেশের হাল। আর সড়ক দুর্ঘটনায় আশায় গুড়েবালি, যেখানে সব স্বপ্ন বৃথা, শুধুই যেন অর্থহীন। দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার মতো সম্ভাবনাময় ৭১ প্রাণ ঝরে গেল শুধু নভেম্বর মাসে। এই ধারাবাহিকতা বহমান অন্যান্য মাসে, এটাই স্পষ্ট পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।

মোটরসাইকেল আরোহী যেন দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা রীতিমতো কপালে চোখ ওঠার মতো।

১৯৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৩৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৪১.৯০ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২২.২০ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯ জন, অর্থাৎ ১৪.২৫ শতাংশ।

এ সময়ে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত, ৭ জন আহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৮টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩০.৬৬%, প্রাণহানি ৩১.৪০%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.৭৯%, প্রাণহানি ১৮.৫৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৯০%, প্রাণহানি ১৪.২৫%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.৫০%, প্রাণহানি ৯.৩৮%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.১২%, প্রাণহানি ৬.৩১%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.১০%, প্রাণহানি ৩.৬১%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.২০%, প্রাণহানি ৯.২০% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৬৯%, প্রাণহানি ৭.২২% ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৪২টি দুর্ঘটনায় ১৭৪ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ১৯টি দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত।

সড়কে মৃত্যু ঠেকাতে নিজেদের আরও তৎপর হয়ে ওঠা জরুরি। পাশাপাশি প্রশাসন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখতে পারেন।

ট্রাফিক আইন নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশ সরব ভূমিকা পালন করতে পারে। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে হবে। গাড়ি চালককে অবশ্যই সুস্থ মস্তিষ্কে গাড়ি চালাতে হবে, ঘুম ঘুম চোখে কিংবা অবচেতন অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। গতি একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা অতীব জরুরি। ওভারটেক করার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে ধৈর্য্য সহকারে গাড়ি চালাতে হবে যেন সহজে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। পথচারীরাও দেখে শুনে রাস্তা পারাপারের ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তার পাশে ফুট ওভারব্রিজ থাকলে অবশ্যই তা ব্যবহার করতে হবে। সর্বোপরি, সবার সচেতনতা ও প্রচেষ্টা রুখে দিতে পারে সড়কে মৃত্যু মিছিল।

জুবায়েদ মোস্তফা

শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়