সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের প্রাণহানি তদন্ত কমিটি

প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীতে বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অগ্নিকাণ্ডে ১৭ জন প্রাণহানির ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল শনিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) আবু আসলামকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ সড়ক দুর্ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিলে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ নিতে স্বজনরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এসেছেন। সকাল থেকে তারা মরদেহ হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছেন। অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের দেহ ভস্মীভূত হওয়ায় তাদের পরিচয় শনাক্ত ডিএনএ পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, নিহতদের ডিএনএ’র সঙ্গে স্বজনদের ডিএনএ মিলিয়ে পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। এরপর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। সরকারি খরচে মরদেহগুলো পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তারা শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীতে শহীদ জিয়া শিশু পার্কে পিকনিক করতে আসছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি মহানগরীর কাপাশিয়া এলাকায় পৌঁছলে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুন ধরে যায়।

মাইক্রোবাসে চালকসহ মোট ১৮ জন ছিলেন। দুর্ঘটনার পর সাতজনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাদের ছয়জনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া আরও ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহতরা হলেনÑপীরগঞ্জের রাঙামাটি গ্রামের সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২) ও শামসুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৩৭)। আরও ছিলেন উপজেলা সদরের ভুট্টু (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০) ও ছেলে ইয়ামিন (১৫)। বড় মজিদপুরের ফুলমিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৮) ও সাবিহা (৩) মারা গেছে। দুরামিঠিপুরের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম (৪৬) ও মাইক্রোবাসের চালক হানিফ (৩০) নিহত হয়েছেন। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পঁচাকান্দ গ্রামে।

মাইক্রোবাসে যাত্রীদের মধ্যে বেঁচে আছেন শুধু পাভেল (২৭) নামে একজন। তিনি এখন রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। দুর্ঘটনায় তার বাবা মোখলেসুর রহমান (৪৫) ও মা পারভীন বেগম (৪০) নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি পীরগঞ্জের ডারিকাপাড়া গ্রামে।

শনিবার রামেক হাসপাতালে মরদেহ নিতে এসেছেন নিহত শহীদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হুদা (২০)। তিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। বলেন, দুর্ঘটনার খবর দ্রুত অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। টিভি খুলে দেখি একই নিউজ দেখাচ্ছে। এরপর আব্বাকে ফোন করলে নম্বর বন্ধ পাই। গাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কয়েকজনকে ফোন করে দেখি তাদের নম্বরও বন্ধ। পরে পত্রিকায় আব্বার নাম দেখতে পাই।

এ ঘটনায় হানিফ পরিবহনের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বেলা ২টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার মাহিন্দ্র বাইপাস থেকে বাসচালক আব্দুল রহিমকে গেপ্তার করা হয় বলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান। গ্রেপ্তার আব্দুল রহিম উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।

গোলাম রুহুল বলেন, শুক্রবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহতের ঘটনায় হানিফ বাসের চালকের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানার এসআই নুর মোহাম্মদ মামলা করেন।