সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানি রেমিট্যার ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে দুই হাজার ৬৯টি সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন (এসটিআর) এবং এক হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক কার্যক্রম প্রতিবেদন (এসএআর) পেয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় যা ৬৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত বিএফআইইউ’র বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭-১৮ এ তথ্য উঠে এসেছে।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ২৫ (১) (ঘ) ধারা এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন ২০০৯ এর ১৬ (১) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সব ‘রিপোর্টিং এজেন্সি’ তাৎক্ষণিকভাবে বিএফআইইউ’র কাছে এসটিআর জমা দিতে বাধ্য থাকে।
রিপোর্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসটিআর ও এসএআরে পাঁচ হাজার ৪২২টি সন্দেহজনক লেনদেন সম্পর্কে রিপোর্ট করেছে, যাতে অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে এসটিআর ও এসএআরে তিন হাজার ৭৩৬টি সন্দেহজনক লেনদেন সম্পর্কে প্রতিবেদন করা হয়, যাতে অর্থের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সবচেয়ে বেশি এসটিআর এবং এসএআর পেয়েছিল বিএফআইইউ। কিন্তু ২০১৭-১৮ ব্যাংক খাত থেকে ৭৭ শতাংশ এসটিআর জমা পড়েছে। ব্যাংকের অর্ধেক এসটিআর জমা পড়েছে মানি রেমিটারদের কাছ থেকে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিএফআইইউ ৫৫৩টি অভিযোগ ও তথ্য বিনিময়ের অনুরোধ পেয়েছে, যার মধ্যে ৪১ শতাংশ এসেছে বাংলাদেশ পুলিশের কাছ থেকে এবং ৩৪ শতাংশ এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে। আগের অর্থবছরের তুলনায় অভিযোগ ও তথ্য বিনিময় অনুরোধ বেড়েছে ৮৩ দশমিক সাত শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অভিযোগ ও তথ্য বিনিময় অনুরোধ ছিল ৩০১টি।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বিএফআইইউতে আসা ৫৫৩টি অভিযোগ ও তথ্য বিনিময় অনুরোধের মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এসেছে ৩৪টি, দুদক থেকে এসেছে ১৮৬টি, পুলিশের কাছ থেকে এসেছে ২২৬টি, গণমাধ্যম থেকে পাওয়া গেছে ২৯টি এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে এসেছে ৭৮টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএফআইইউ ৬৭৭টি এসটিআর ও এসএআর নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত করেছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সেসব তথ্য দিয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১২১টি।
তদন্ত করে দেখা এসটিআর ও এসএআরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ডিজিটাল হুন্ডি সম্পর্কিত। এছাড়া ২৫টি ছিল জালিয়াতির, চারটি ছিল স্বাক্ষর ও নথি জাল করার। তিনটি ছিল দুর্নীতি ও ঘুষের। সন্ত্রাসে অর্থায়ন সংক্রান্ত ছিল ২১টি। মাদক চোরাচালান সম্পর্কিত ছিল আটটি। অপহরণ ও মুক্তিপণ সম্পর্কিত ছিল দুটি। চাঁদাবাজি সম্পর্কিত ছিল একটি।
প্রসঙ্গত; বিএফআইইউ’র বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রাপ্ত এসটিআর বা এসএআরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকে না। এ সংস্থাটি শুধুই একটি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা। এর নিজস্ব কোনো দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ কারণে সংশ্লিষ্ট এসটিআর বা এসএআরের বিষয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ নেয় বিএফআইইউ।