Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 1:13 pm

সফটওয়্যার প্রকৌশলী হতে চায় সরিৎ

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট: এসএসসিতে রাজশাহী বিভাগে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে জয়পুরহাটের সরিৎ চৌধুরী। পা দুটি অবশ হলেও মনের গতি ছিল ঠিকই। প্রচণ্ড মানসিক শক্তির কারণে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে বরাবর।
জয়পুরহাট শহরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি রামদের বাজলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বরাবর মেধা তালিকার শীর্ষে ছিল সরিৎ। এবারও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে রাহশাহী বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দুই বছর বয়স থেকে তার দুটি পা অবশ ছিল। শারীরিক বাধা অতিক্রম করে উচ্চশিক্ষা শেষে সে হতে চায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
সরিৎ চৌধুরীর বাড়ি জয়পুরহাট শহরের খঞ্জনপুর এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা সঞ্জিত চৌধুরী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে জেলার পাঁচবিবিতে কর্মরত আর মা জয়া চৌধুরী গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে সরিৎ চৌধুরী প্রথম সন্তান। দুই বছর বয়সে কলেরায় আক্রান্ত হলে ভুল চিকিৎসায় দুটি পাই অবশ হয়ে যায়। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ায় তার মা সব চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন বলে দাবি করলেন সরিতের বাবা।
সাধারণ জ্ঞান চর্চা, ইংরেজিতে কথোপকথন, ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়েও পারদর্শী সরিৎ। সদা হাস্যোজ্জ্বল সরিৎ আশপাশের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সরিতের জেঠাত ভাই নয়ন চৌধুরী ও বোন বিপাশা চৌধুরী জানান, তারা উচ্চশিক্ষা লাভ করলেও সরিৎ তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। সরিৎ জানায়, সে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হবে। তবে চলাফেরা করতে না পারায় তার খুব কষ্ট হয়, সে স্বাভাবিকভাবে নিজ পায়ে ভর দিয়ে চলতে চায়।
সরিতের মা জয়া চৌধুরী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ‘সেই দুই বছর বয়সে ওর দুটি পা অবশ হলো। সেই থেকে প্রায় ১৪/ ১৫ বছর ধরে ওকে কোলে নিয়ে থাকি, নিয়মিত স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। এখন ওর ভালো ফলাফলে বড় বেশি দুশ্চিন্তা হয়। কোথায় কীভাবে থাকবে, আমরা মারা গেলে ওকে কে দেখবে!’
জয়পুরহাট সরকারি রামদের বাজলা উচ্চবিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রোস্তম আলী হেলালী জানান, সরিতের আশাতীত ফলাফলে অভিভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরিতের চিকিৎসা ও শিক্ষা জীবনে সামর্থ্যবান ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের আবেদন জানান তিনি।