Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 6:42 pm

সফলতার সিঁড়ি ‘বাউ মুরগি’ পালন

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): মেহেরপুরে সদর উপজেলায় ৫০টিরও বেশি বাউ মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে এই বাউ মুরগি পালন করে অনেকেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দেখতে ও স্বাদে দেশি মুরগির মতো হওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ মুরগি। ফলে চাহিদা ও দাম থাকায় দিন দিন বাড়ছে এই মুরগি পালন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফ আলী এবং অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান মোল্লা দীর্ঘদিন গবেষণা করে ‘বাউ ব্রো মুরগি বা বাউ মুরগি’ নাম দিয়ে নতুন জাতের দুটি স্টেইন বা জাত উদ্ভাবন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরগির জাত দুটি এখন টেকসই প্রযুক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির মতো ঘরে পালন করা যায়। ৪২-৪৫ দিনে এ মুরগির ওজন হয় এক কেজির ওপর। যা বাজারজাত করা যায়। বর্তমানে দেশীয় মুরগির মতো ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

সদর উপজেলার চকশ্যামনগর গ্রামের বাউ মুরগি খামারি রহিলা খাতুন  জানান, স্থানীয় দারিদ্র্য বিমোচন সংস্থা (ডিবিএস) এর সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি মুরগি পালন করে দেড় মাস পর বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা লাভ করেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে সে আরও ১৫০টি মুরগি নিয়ে পালন করছে। ইতোমধ্যে সে বিক্রি শুরু করেছে। এই মুরগি দেশি মুরগির মতো হওয়ায় বেশ চাহিদা আছে বাজারে। দামও ভালো পাচ্ছে বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার বাঁড়িবাকা গ্রামের আর এক খামারি আরজিনা খাতুন  জানান, এই মুরগি পালনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। এই মুরগির এত চাহিদা যে এলাকার অনেকে তার কাছ থেকে মুরগি নিয়ে স্বল্প পরিসরে বাড়িতে পালন করছে। তিনি আরও জানান, এ মুরগি পালনে সুবিধা হলো দেশি মুরগির তুলনায় অল্প দিনে বাজারজাত করা যায়।

ডিবিএসের কৃষি ইউনিটের (প্রাণিসম্পদ) কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন সরদার  জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত একটি উন্নত মুরগির জাত। এ জাতের মুরগির মৃত্যু হার খুবই কম। ডিবিএস থেকে মুরগির টিকা প্রদান ও বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে কীভাবে মুরগি পালন করা যায় সেভাবে খামারিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ মুরগি পালনে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় খামারিরা লাভবান হচ্ছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, ব্রয়লারের মতো মুরগির বাচ্চা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না খামারিদের। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশেই সাশ্রয়ী দামে বাচ্চা উৎপাদন করা যাচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা ছাড়া এই জাত দুটিতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নেই। বর্তমানে স্থানীয় দারিদ্র্য বিমোচন সংস্থা পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সদর উপজেলায় বেশ কিছু খামারে এই মুরগিগুলো পালন করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। দেশে বাচ্চা উৎপাদন এবং দেশীয় আবহাওয়ায় পালনযোগ্য এ জাত দুটি খুব কম সময়ে জনপ্রিয়তা পাবে বলে তিনি আশা করেন।