নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ আজ দেশের অর্থনীতির যে দুরবস্থা, সে সবকিছুর মূলে রয়েছে সরকারের দুর্নীতি। তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই আন্তর্জাতিক একটা জরিপে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, বাংলাদেশে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, এই দুর্ভিক্ষটা ছিল মানবসৃষ্ট। অর্থাৎ সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা, তাদের ম্যানেজ করতে না পারা। আজকেও ঠিক একই চিত্র বাংলাদেশে। সরকারের
দুর্নীতি, সামগ্রিক ব্যর্থতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনের যে কী অবস্থা, তা তুলে ধরতেই বিএনপি এ সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারের চালিকাশক্তিরাই। শর্ষেতে ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, এখানকার যে মূল্যস্ফীতি, এখানে যে অর্থনৈতিক দুরবস্থাÑএর সবকিছুর মূলে হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, তাদের দুর্নীতির কারণেই আজকে পণ্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার দাপটে মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারের দুর্নীতি, টোটাল ফেইলিউর, অব্যবস্থাপনার কারণে আজকে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যেখানে সরকারের বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই, সরকার সেখানে টাকা দিচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে নিয়ে গেল। কিছুদিন আগে দেখেছেন, এয়ারপোর্টের রাস্তার সমস্যা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ২১৩ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কী অবস্থা? ১০ বছরে এখন পর্যন্ত এই অবস্থায়ই পড়ে আছে। অর্থাৎ এসবের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জ্বালানিতে দেখেছেন, তেলের বেলায় কী দুর্নীতি করেছে। বিপিসি একইভাবে দুর্নীতি করেছে। বিদ্যুতের বেলায় দেখেছেন, তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। এখানে মূল কারণটিই হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। হয়তো বিশ্ববাজারের কারণে সহনীয় পর্যায়ের কিছু হতে পারত। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৪ সালে তারা এভাবে দুর্নীতি করেছে, আজকেও একইভাবে তারা দুর্নীতি করছে।’ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ?ও মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবেই গত জুন মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ নানাভাবে ব্যয় কমিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। নিজের আয় দিয়ে আর চলতে না পারায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেকেই বাসা ছেড়ে মেসে উঠেছেন। মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।