সবজির বাজার চড়া মুরগি ও ডিমে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাসজুড়ে সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও ঈদের পর থেকে হঠাৎ করেই চড়া হলো সবজির বাজার। বিক্রেতারা বলছেন, বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ, আবার কিছু কিছু কেবল উঠতে শুরু করেছে, যে কারণে দাম কিছুটা বেশি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। এদিকে মুরগি ও ডিমের দামে স্বস্তি দেখা গেছে। একদিকে যেমন ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে, তেমনি ডিমের দামেও বিরাজ করছে স্থিরতা। ঈদ-পরবর্তী বাজারে মাছের দাম যখন বাড়তির দিকে, তখন মুরগির মাংসের দামে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য যেন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে চাহিদা কম থাকায় সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম তুলনামূলকভাবে কমেছে। এদিকে মুরগির দাম সাধারণ মানুষের কিছুটা নাগালে আসায় কিছুটা স্বস্তির দেখা মিলেছে। বিশেষ করে মাছ কিনতে এসে অনেকেই এখন মুরগি কিনে ফিরছেন। ভোক্তারা আশা করছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ ও নজরদারি থাকলে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে।

আজকের বাজারে প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, পটোল ৮০, করলা ৮০, গাজর ৬০, বরবটি ৮০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, টমেটো ৪০ থেকে ৫০, কচুর লতি ১০০, চিচিঙ্গা ৬০, বেগুন ৯০, পেঁপে ও শিম ৬০, আলু ৩০, কাঁচামরিচ ৮০, শসা ৬০ এবং শজনে কেজিপ্রতি  ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের আগে রমজান মাসজুড়েই সব ধরনের সবজি কিনেছি কম দামে। কিন্তু ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ সবজি এখন কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কিছু কিছু সবজি আবার ১০০ টাকায়ও কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সবজির দাম বর্তমানে বাড়তি।

সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে রাজধানীর মালিবাগ এলাকার সবজি বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন মানু বলেন, মূলত এখন বেশ কিছু সবজির মৌসুম শেষ, এ ছাড়া কিছু কিছু সবজি কেবল উঠতে শুরু করেছে, যে কারণে বাজারে সবজি সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম। কিছুদিনের মধ্যে নতুন করে আবার সবজি উঠতে শুরু করবে, তখন সবজির দাম আবার কমে আসবে।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, দাম বেশি কারণে আজ আধা কেজি করে সবজি কিনলাম। দাম যখন আবার কমবে তখন এক কেজি করে সবজি নেব। আজকের বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। মূলত ঈদের পর থেকেই সবজির দাম বাজারে বেশি। ঈদের আগে রমজান মাসজুড়ে সবজি কেনায় খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। কিন্তু এখন আবার দাম বেড়ে যাচ্ছে, এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের অস্বস্তি শুরু হচ্ছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, রমজান মাসজুড়ে সবজির দাম কম থাকলেও ঢ্যাঁড়শ, পটোল, করলা এ ধরনের সবজির দাম বেশি ছিল। তবে এখন এগুলো সবজির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমে এসেছে। মূলত শীতকালীন সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় ওইসব সবজির সরবরাহ বাজারে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এছাড়া কিছু সবজির মৌসুম কেবল শুরু করছে। পরিপূর্ণভাবে এসব সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে এগুলোর দামও কমে যাবে। মূলত ঈদের সময় বাজারে? সবজি সরবরাহের গ্যাপ সৃষ্টি হয়, সে কারণেই সবজির দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।

এদিকে বিক্রেতাদের দেয়া তথ্যমতে, আজকের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ঈদের আগে এই মুরগির দাম ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। সোনালি মুরগির কেজি এখন ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০ টাকার ওপরে।

এদিকে আজকের গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজিতে। যদিও ঈদের আগে এই দাম ৮০০ টাকার ওপরে উঠেছিল। খাসির মাংসের দাম এখনও কেজিপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকার নিচে নামেনি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আজকের বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় এ দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্থির রয়েছে। ফলে অনেকেই মাংস না কিনে বিকল্প হিসেবে মুরগি বা ডিম বেছে নিচ্ছেন।

এদিকে মুরগির দামে স্বস্তি মেলায় ক্রেতারা বলছেন, মাছ ও অন্যান্য প্রোটিনের চড়া দামে মুরগিই এখন একমাত্র ভরসা। রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা গৃহিণী শিউলি বেগম বলেন, পাবদা মাছের কেজি ৪০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০-৮০০, যেখানে ১৯০ টাকায় মুরগি পাওয়া মানেই বাঁচা গেল! তাই মাছের জায়গায় মুরগি কিনে ফেললাম।

বেসরকারি চাকরিজীবী সেলিম হোসেন বলেন, ঈদের পরে বাজারে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেড়ে গেছে, যে কারণে মাছ খাওয়া এখন অনেকটা বিলাসিতা হয়ে গেছে। তবে আজ বাজারে এসে দেখলাম ব্রয়লারের দাম কম, ডিমও আগের মতোই। অন্তত এটুকু কিনে পরিবারে প্রোটিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে।

এদিকে দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকায় এবং বিক্রি ভালো হওয়ায় খুশি মুরগি ও ডিমের বিক্রেতারা। রামপুরা বাজারের ডিম বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, ডিমের বাজারে আগে শক্তিশালী একটা সিন্ডিকেট ছিল, এখন সেটা অনেকটাই ভেঙে গেছে। এ কারণে ডিমের দাম বাড়েনি। ডিম এখন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য কেনা সবচেয়ে সহজ।

মুরগি বিক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে কাস্টমার যতই থাকুক, দাম ছিল অনেক। এখন চাহিদা কম, তাই দামও কমাতে হচ্ছে। তবে এই দামে বিক্রি করলেও লাভ থাকে, বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

বনশ্রী এলাকার আরেক বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, অনেকে মাছ কিনতে এসে এখন ব্রয়লার নিচ্ছেন। কারণ পাবদা-টেংরা বা চিংড়ির দাম অনেক বেশি। তার চেয়ে মুরগি নিয়ে বাসায় রান্না করাটা তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।