সবার জন্য নিরাপদ পানি প্রাপ্তি নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন

সুপেয় খাবার পানি নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়। এদিক থেকে আমরা ভালো অবস্থানেÑস্বাদু পানির ভালো মজুত রয়েছে। তা সত্ত্বেও পানি নিয়ে অব্যবস্থাপনা ও তাতে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোয় পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পানিতেও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই সময় নগরাসী প্রত্যাশা করেছিল রাজধানীবাসীর নিরাপদ পানি প্রাপ্তির পথ সুগম হবে। আদৌ হয়েছে কি না, তা আমরা জানি। পানির অপর নাম জীবন।

মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদেই দেশের সর্বত্র পানির মান পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়াটা জরুরি। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো নিরাপদ পানি নিয়ে এর পর কয়েকবার আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানিকে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নিরাপদ খাবার ও ব্যবহারযোগ্য পানি নিশ্চিত করতে ২০২০ সালেও সুয়োমোটো রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার রায়ে আদালত বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ মনে করিয়ে দিয়েছেন। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানি পাওয়া একটি মৌলিক অধিকার এবং এ পানির অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

এছাড়া আদালত নিরাপদ পানযোগ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক স্থান অর্থাৎ আদালত, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল, রেলস্টেশন, হাটবাজার, এয়ারপোর্টসহ প্রত্যেক পাবলিক প্লেসে নিরাপদ পানযোগ্য পানি প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও পানযোগ্য পানি সাশ্রয়ী মূল্যে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২০২৬ সালের মধ্যে সব পাবলিক প্লেসে নিরাপদ পানি বিনা মূল্যে সরবরাহে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সেই মর্মে একটি রিপোর্ট সরকারকে আদালতে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত মামলাটি চলমান রেখেছেন।

বছর কয়েক আগে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে খাবার পানির ৪১ শতাংশেই ক্ষতিকর ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এ ছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানির ৮০ শতাংশেই রয়েছে ক্ষতিকর জীবাণু, ১৩ শতাংশে আছে আর্সেনিক। ঢাকাবাসী, বিশেষত নি¤œ আয়ের মানুষ ওয়াসার পানির ওপরই নির্ভরশীল। নিরাপদ পানি পাওয়া তাদের মৌলিক অধিকারও বটে। সেটা নিশ্চিত হচ্ছে না, তা বলাই যায়। পানি পরিশোধন করতেও তাদের অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে; মাঝখান দিয়ে লাভবান হচ্ছে কিছু কোম্পানি। শহরাঞ্চলে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। এ গ্রামাঞ্চলেও খাবার পানিতে আর্সেনিক নিয়ে আলোচনা নেই দীর্ঘদিন। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া চলে না। দেশের সব মানুষেরই নিরাপদ পানি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কী কারণে পানি অনিরাপদ হয়ে পড়ছে, তা খুঁজে বের করে নিরসনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।