সব পর্যায়ে নজরদারি করে সহনীয় রাখুন নিত্যপণ্যের দাম

বাজেট আমাদের সীমিত এবং নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজেট ঘোষণার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন। আবার বাজেটে বাড়ানো না হলেও কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন তারা। এবার বাজেট পাস হতে ঢের বাকি। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। বাজারে নতুন করে তেল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও সবজির দাম বেড়েছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও। সবমিলিয়ে বাজার করতে গিয়ে নাকাল সাধারণ মানুষ। কয়েকটি বাজার ঘুরে আমাদের প্রতিবেদক জানান, বাজার মধ্যবিত্তদের জন্যও আতঙ্কের জায়গা হয়ে গেছে। মাসের ফর্দ কাটছাঁট করতে করতে এমন অবস্থায় ঠেকেছে, যা না হলেই চলে না। তারপরও কুলানো যাচ্ছে না।

নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। খরচ বাঁচাতে যতই কাটছাঁট করা হোক না কেন, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে এসব পণ্য বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। অথচ সেগুলোর দাম ক্রমেই চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। মাছের দাম কমলেও তা কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। মোটকথা, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে গঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল সক্রিয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিত্যপণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, আমদানির পরিমাণ, মজুত ও সংগ্রহ পরিস্থিতি এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ বিবিধ তথ্য পর্যালোচনাপূর্বক ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। টিসিবির মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক নিত্যপণ্যের মজুত গড়ে তুলতে হবে এবং খোলাবাজারে বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থায় যাতে বিঘœ না ঘটে, সেজন্য পথে পথে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বাজার তদারককারী সংস্থার কারও যোগসাজশের কথাও অনেকে বলেন। সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে। সাধারণ মানুষের ধারণা, ব্যবসায়ীরা যতই সংগঠিত হোক, সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাই সরকার জনভোগান্তি নিরসনে কঠোর হতে পারে। দুর্বল বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকাসহ দেশের স্থানীয় বাজারগুলোয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রয়োজনীয় তদারকি কার্যক্রম বাড়াতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধিকারী ব্যবসায়ী ও মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা কিংবা শৈথিল্য প্রশ্রয় পেলে বাজার কখনোই নিয়ন্ত্রণে আসবে না। শ্রমজীবীরা কী দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন, তা কমবেশি সবার জানা। পণ্যের দাম এখন বাড়ছে, বাজেট প্রস্তাব পেশের পর দাম বাড়বে, পাস হওয়ার পর দাম বাড়বে। পাশাপাশি ঈদুল আজহা উপলক্ষেও দাম বাড়বে, কিংবা বাড়াবে ব্যবসায়ীরা। এতবার পণ্যের দাম বৃদ্ধির ধকল কীভাবে সইবে, এখন থেকেই হিসাব কষতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজির কথা বলা হয়। এখন সংঘবদ্ধ চক্রের পরিচয় অজানা নয়। এরা ভিন গ্রহের নয়, আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেনাজানা। উচিত হবে মজুতদারদের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রবণতা রোধ করা।