ফারুক আলম, লালমনিরহাট: বাড়ির সামনের আঙিনার একপাশের কোণে বাঁশের বেড়া দিয়ে চারকোণা বাগান। সেখানে দু-চারটা লাউ, কয়েকটি কুমড়া, বেশ কিছু সবজিসহ বেড করে সাজিয়ে লাগানো হয়েছে কয়েক পদের শাক। স্বল্প জমিতে লাগানো এসব শাকসবজি অল্প পরিচর্যায় হƒষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ। রাসায়নিক ও কীটনাশক ছাড়াই ভার্মিকম্পস্ট সার ব্যবহারের কারণে বলা হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি।
এভাবে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের মরিচবাড়ি নামক একটি গ্রামের প্রায় প্রতি ঘরে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সরাসরি সহযোগিতা আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অর্থায়নে এসব বাগানের নামকরণ করা হয়েছে পারিবারিক পুষ্টিবাগান। ওই এলাকার কৃষকদের পরিত্যক্ত ২ শতাংশ জমিতে করা হয়েছে পুষ্টিবাগান। পাশাপাশি তুলনামূলক কম জমিতে হরেক রকম ফলদ গাছ, ঔষধি গাছ আর বিভিন্ন শাকসবজি দিয়ে সাজানো হয়েছে আবাসন প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের ফাঁকা জায়গা।
আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে সুন্দর মডেল করে তৈরি করা হয়েছে এসব পুষ্টিবাগান। সুন্দর করে বাঁশের নির্মাণশৈলী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে বাগান, যাতে কৃষকরা একটার পর একটা সবজি চাষ করে চাহিদা পূরণ করতে পারে।
কৃষক করিম উদ্দিন বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা পুষ্টিবাগান সম্পর্কে জানতে পারি। উপজেলায় আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে সার ও বীজ দেয়। আগে আমরা কীটনাশকের ব্যবহার জানতাম না। এখন আমরা বাড়িতেই কীটনাশক ছাড়া শাকসবজি উৎপাদন করতেছি। নিজেরা নিরাপদ সবজি খাচ্ছি, পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনকেও দিচ্ছি, জানাচ্ছি। এখন আর বাজার থেকে আমাদের কিনতে হয় না।
আব্দুল বাতেন বলেন, পুষ্টিবাগান করে আমাদের ভালো হয়েছে। সার, বীজ উপজেলা থেকে দিছে। প্রায় দুই শতক জমিতে পুষ্টিবাগান করেছি। প্রতিদিন এখান থেকে তুলে কিছু খাই আবার কিছু বিক্রিও করি।
আদিতমারী কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, আমরা একটি প্রকল্প থেকে এই পুষ্টিগ্রাম করেছি। পাশাপাশি অন্য এলাকাগুলোতেও করব। কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে করে তাদের পরামর্শ দেয়া হবে। কৃষকদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। পুষ্টিবাগান করতে যা যা পরামর্শের প্রয়োজন, সব রকম সহায়তা দিতে আমরা মাঠে কাজ করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আমরা প্রকল্প থেকে করেছি। পুষ্টিবাগান করতে সব রকম সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অন্য উপজেলাতে সম্প্রসারণের জন্য কাজ করছি। কৃষি মডেল তৈরির উদ্দেশ্যই হলো পুষ্টিবাগান সম্প্রসারণ করা।