সমস্যায় জর্জর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

স্থাপিত হওয়ার ৪৪ বছরেও অসংখ্য সমস্যায় জর্জর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যেন শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো।

ক্যাফেটেরিয়া: ইবির ক্যাফেটেরিয়া বন্ধ প্রায় এক বছর ধরে। সীমিত আসন, অসুন্দর ডেকোরেশন, খাবারের নিম্নমান, খাবারের অতিরিক্ত দাম প্রভৃতি ক্যাফেটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য। সর্বশেষ ঠিকাদার জটিলতার কারণে বন্ধ হয় এটি।

গ্রন্থাগার: ক্লাস চলাকাল ব্যতীত গ্রন্থাগার বন্ধ রাখা, অপর্যাপ্ত আসন, ধীরগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট, ই-লাইব্রেরি না থাকা, বইয়ের ঘাটতিসহ নানা সমস্যায় শিক্ষার্থীদের অভিযোগের তালিকায় রয়েছে ইবির গ্রন্থাগার।

ফোয়ারা: প্রায় তিন বছর বন্ধ আছে ইবির সততা ফোয়ারা। বিশেষ দিনগুলোয়ও বন্ধ থাকে এটি। নেই সংস্কারের প্রয়াস।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষ্ক্রিয়তা: ইবি’কে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় করার পর স্মার্ট করার দাবি থাকলেও এখনও কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ইবির কোনো ভেরিফাইড অ্যাকাউন্ট নেই। গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ, বিজ্ঞাপন, প্রচার-সম্প্রচার, প্রতিবেদন ও খবরাখবর দ্রুত শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও অন্যান্য সবাইকে জানানো, গুজব রটানো থেকে বিরত থাকা, সঠিক তথ্যসূত্র যুক্ত তথ্য নিশ্চিত করা, বহির্বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকলাপ, ঐতিহ্য, প্রাপ্তি, গুণাবলি তুলে ধরা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব অর্জন সবার কাছে একযোগে ছড়িয়ে দেয়াসহ অনেক কারণেই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকা অবশ্যই জরুরি।

জিমনেসিয়াম: ক্লাস চলাকালীন দিন ছাড়া জিমনেসিয়াম বন্ধ রাখা, অকেজো ও মরিচাযুক্ত ব্যবহারের অনুপযোগী সরঞ্জাম থাকা, জিম ট্রেইনার না থাকা এবং অপর্যাপ্ত জিম সরঞ্জামসহ আরও নানা কারণে জিমনেসিয়াম সৌন্দর্য হারিয়েছে। নেই জিম উন্নয়নের জন্য কোনো ধরনের ব্যবস্থা।

পোষ্য কোটায় ভর্তি: স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির সময় পোষ্য কোটায় অযোগ্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়।

অভ্যন্তরে ভাঙা রাস্তা: বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ভাঙা, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষত, টিএসসির সামনে থেকে সাদ্দাম হোসেন হলের দিকে যে মোড় নিয়েছে, সেই মোড়ের অংশের রাস্তা ভাঙা, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রতিদিন বাস চলাচলের সময় অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এছাড়া অনুষদের ভবনের সামনে, প্যারাডাইজ রোড থেকে দ্বিতীয় ফটক, প্যারাডাইজ রোড থেকে মফিজ লেকসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা রাস্তা রয়েছে।

আবাসিক হলে নিম্নমানের খাবার: বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই খাবারের মান খুবই খারাপ, যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। রয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব।

ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণাধীন বহুদিন ধরেই। নেই যথেষ্ট প্রয়োজনীয় শিক্ষক। সঠিক পরিচালনার অভাবে পড়াশোনার নিম্নমানসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ হারাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।

কেন্দ্রীয় মসজিদ: প্রায় দুই যুগ ধরে চলছে কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ, যা এখনও শেষ হয়নি। মসজিদে নেই পর্যাপ্ত সাউন্ড সিস্টেম। সংস্কারে নেই কোনো উদ্যোগ।

সুপেয় পানি: ইবির ফুটবল মাঠের আশেপাশে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। খেলাধুলা শেষে শিক্ষার্থীদের ক্লান্ত অবস্থায় পানির জন্য যেতে হয় বহুদূর।

আবর্জনা: ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা থাকার কারণে ইবির সৌন্দর্য হচ্ছে ক্ষুণ্ন। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষের নেই যথাযথ কোনো উদ্যোগ।

এছাড়া বিভিন্ন বিভাগে সেশন জট, শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থা না পাওয়া, ফি জমাদানে অনলাইন সেবা পুরোপুরিভাবে চালু না হওয়া, ধীরগতিসম্পন্ন নির্মাণাধীন কাজ, চিকিৎসাকেন্দ্রে চিকিৎসা ও ওষুধ না থাকাসহ আরও নানা সমস্যা রয়েছে ইবিতে।

প্রশাসনের বিশেষ সুদৃষ্টি কামনা করছি যেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনায় নিতে, দেশ ও বিশ্ব পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উঁচু করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে এবং সব সমস্যা দূরীকরণে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

মিনহাজুর রহমান মাহিম

শিক্ষার্থী

বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়