Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 2:04 am

সমস্যায় জর্জর নোয়াখালী পৌরসভা সমাধানের আশ্বাস মেয়রের

আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী: খাল দখল, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যত্রতত্র কাঁচাবাজার, শব্দদূষণ, প্রয়োজনীয় নর্দমা ও ডাস্টবিনের অভাবসহ নানা সমস্যায় ভুগছে নোয়াখালী পৌরবাসী। দৃশ্যমান এ সমস্যাগুলো সমাধানে তৎপর বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র।

১৮৭৬ সালে স্থাপিত নোয়াখালী পৌরসভা বর্তমানে ১৩ লাখের অধিক বসবাসরত নাগরিকের চাপে কিছুটা ভারাক্রান্ত। তবে এখানকার নাগরিক নন এমন লোকের সংখ্যাও লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা পৌর কর্তৃপক্ষের। সেসব বাড়তি জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তার নানা চাপও সামলাতে হয় এ  পৌরসভাকে।

নোয়াখালী পৌরসভায় জেলা প্রশাসনের প্রধান দপ্তরগুলো অবস্থিত। দেশের প্রাচীন ও ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে পৌরবাসী যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, এখানে তা নেই বললে চলে। জেলার সচেতন নাগরিকরা জানান, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, শিল্পাঞ্চল এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে এখানে বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক লোক এ পৌরসভায় বসবাস করছেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ পৌরসভা নানা সমস্যায় জর্জর দীর্ঘদিন ধরে।

পৌর এলাকার ছাগলমারা খালটি একসময় ছিল বেশ খরস্রোতা। অনেকে এ খালে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অনেকে নানা প্রজাতির মাছ শিকার করতেন। সেসব আজ অতীত। খালটি এখন দোকানপাট, বাসাবাড়ির নির্গত দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে এক ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালের পানির সঙ্গে দোকানপাটের অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ও মলমূত্র মিশে দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। খালটির পানির যে অবস্থা, তাতে সেখানে জলজ কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকা দুষ্কর। এ খালের বিষাক্ত পানি গিয়ে মিশছে মেঘনায়। পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাঝে মধ্যে এ খালের সংস্কার হলেও দু’দিন পরেই আবার দখল করে নেয় আশপাশের দখলদাররা। ফলে পৌরবাসী জলাবদ্ধতার শিকার।

এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বাড়িঘর নির্মাণ, আবাসিক এলাকায় ছোটখাটো মার্কেট, সংস্কারবিহীন খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, সড়কবাতির অভাব ভোগাচ্ছে পৌরবাসীদের। তাছাড়া মাদকদ্রব্যের বিস্তার, যত্রতত্র কাঁচাবাজার, শব্দদূষণ, মানহীন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় ড্রেন ও ডাস্টবিনের অভাব, ময়লা-আবর্জনা ও কলকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে প্রভাব, যানজট, লাগামহীন রিকশা ভাড়ায় অতিষ্ঠ পৌরবাসী। শিশুপার্ক ও খেলার মাঠের অভাব, গাড়ি পার্কিংয়ের অভাব, শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশে মঞ্চের অভাব এবং মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবসহ অসংখ্য সমস্যা রয়েছে।

পৌরবাসী জানায়, নাগরিকদের বাসাবাড়িতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও প্রায়ই অচল থাকে। অনেক বাড়িতে মোটর বা সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে পানি তোলা হয়। একইভাবে ১২টি আবাসিক হোটেল, দুটি গেস্ট হাউস, আটটি  রেস্ট হাউস ও বেশ কয়েকটি খাবার হোটেলে প্রতিদিন লাখ লিটার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে মাটির গভীর থেকে। ফলে মাটিতে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। আবার শহরের সরকারি দীঘিগুলোর বেশিরভাগই জাল দলিলে দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা।

নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, সাত-আট বছর আগে জেলা গ্রোথ সেন্টার প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার নাগরিকদের বাসা-বাড়িতে পানি সরবরাহের পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষ করে পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তবে পৌরসভা এখনও অনেক বাড়িতে পানি সরবরাহ করতে হিমশিম পোহাচ্ছে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুকুমার বড়–য়া পৌরসভার আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র মার্কেট ও শিল্প-কারখানার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অনেক ভবন ও কারখানা অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে।

পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্লাহ খান জানান, নাগরিক সমস্যা সমাধানে তৎপর পৌরসভা। তিনি মেয়র হওয়ার পর প্রায় ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান করছেন বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করলে অচিরে সব সমস্যার সমধান করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।