নাছিমা বেগম: আমাদের সমাজ ও সাহিত্যাঙ্গনে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত। বেগম রোকেয়ার জন্ম উনিশ শতকের বাংলাদেশে। এ সময় ভারতবর্ষে নারীদের বিশেষ করে মুসলিম নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মুসলিম নারীদের পর্দার নামে কার্যত কঠোর অবরোধের মধ্যে বন্দি জীবনযাপন করতে হতো। শিক্ষার আলো তাদের জন্য ছিল নিষিদ্ধ। এমনই এক সময়ে একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সমাজসংস্কারক হিসেবে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের আবির্ভাব ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের ও সমাজের সার্বিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করার অভিপ্রায়ে নারীর ব্যক্তিসত্তা বিকাশের লক্ষ্যে তিনি চেয়েছিলেন নারী মুক্তি ও নারী স্বাধীনতা। সেই সময়টাকে অনেকেই এদেশের নবজাগরণ বা রেনেসাঁসের কাল বলে গণ্য করেছেন।
উনিশ শতকের বাংলায় অকল্যাণকর সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রথম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। নবজাগরণের চেতনার প্রবর্তক বলে খ্যাত এই দুই মনীষীর সমাজ-সংস্কারের প্রথম উদ্যোগ ছিল নারীর অবস্থার উন্নতি। রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদ সাধনে সফল হয়েছিলেন এবং বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ আইন পাস করাতে সমর্থ হয়েছিলেন।
হিন্দু নারী মুক্তি আন্দোলনে সে সময়কালের হিন্দু নারীদের দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন মহিলা সমিতি-সংগঠন নারীর কল্যাণ ও শিক্ষাবিস্তারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সে সময় বাঙালি মুসলিম সমাজে নারীর কল্যাণে কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যায় না। শুধু ভূপালের নবাব বেগম সুলতান জাহানের নেতৃত্বে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ভূপালে একটি সর্বভারতীয় মুসলিম মহিলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বাল্যবিবাহ, নারীর উত্তরাধিকার, স্ত্রীশিক্ষা, পর্দাপ্রথা প্রভৃতি প্রশ্ন আলোচিত হয় এবং বিভিন্ন সমাজ সংস্কার আন্দোলনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তখনকার বাংলাদেশে মুসলিম নারীদের শিক্ষার অবস্থা কী ছিল তা নিয়ে কেউ কিছু বলেননি। বাস্তবতা হলো শিক্ষা দীক্ষায় হিন্দুর তুলনায় এদেশের মুসলমান পুরুষেরাই তখন পিছিয়ে। মেয়েদের জীবন কাটাতে হতো কঠোর পর্দাপ্রথার মধ্যে। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতে, রোকেয়ার জীবনের প্রধানতম গৌরব হলো রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম হওয়ার পরেও তার সমাজ সংস্কারের সচেতনতা ছিল অসাধারণ; তিনি এই পর্দাপ্রথার অচলায়তনের প্রাচীর ভাঙতে পেরেছিলেন।
সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে রোকেয়া নিজের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সাহসিকতা নিয়ে নারী সমাজকে জাগাতে চেয়েছিলেন। একদিকে তিনি ক্ষুরধার লেখনি চালিয়েছেন; অন্যদিকে নিজের একান্ত প্রচেষ্টায় সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি ‘স্ত্রী জাতির অবনতি’ প্রবন্ধে লিখেছেন, প্রথমে জাগিয়া উঠা সহজ নহে, জানি; সমাজ মহা গোলযোগ বাধাইবে জানি; ভারতবাসী মুসলমান আমাদের জন্য ‘কৎল’ এর (অর্থাৎ প্রাণদণ্ডের) বিধান দিবেন এবং হিন্দু চিতানল বা তুষানলের ব্যবস্থা দিবেন, জানি! (অর্থাৎ ভগ্নিদিগেরও জাগিবার ইচ্ছা নাই, জানি!) কিন্তু সমাজের কল্যাণের নিমিত্ত জাগিতে হইবেই। বলিয়াছিত কোন ভাল কাজ অনায়াসে করা যায় না। কারামুক্ত হইয়াও গ্যালিলিও বলিয়াছিলেন, কিন্তু যাহাই হউক পৃথিবী ঘুরিতেছে (‘but nevertheless it (Earth) does move’)!! আমাদিগকেও ঐরূপ বিবিধ নির্যাতন সহ্য করিয়া জাগিতে হইবে। বেগম রোকেয়া তার এই জাগ্রত চেতনা থেকেই ঘুমন্ত নারীদের জাগানোর জন্য বলেছিলেন, ‘অতএব জাগ, জাগ গো ভগিনি!’ বোরকা প্রবন্ধে সব নিয়মেরই একটা সীমা আছে উল্লেখ করে বেগম রোকেয়া লিখেছেন, এদেশে আমাদের অবরোধ প্রথাটা বেশি কঠোর হইয়া পড়িয়াছে। যেমন অবিবাহিতা বালিকাগণ স্ত্রীলোকের সহিতও পর্দা করিতে বাধ্য থাকেন। এ প্রবন্ধে তিনি অন্যায় পর্দা ছেড়ে আবশ্যকীয় পর্দার পক্ষে থাকলেও তার মূল বক্তব্য ছিল উন্নতির জন্য অবশ্যই উচ্চশিক্ষা প্রয়োজন। তার মতে শিক্ষার অভাবই নারীর স্বাধীনতা লাভের প্রধান অন্তরায়। এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘একখানা জ্ঞানগর্ভ পুস্তক পাঠে যে অনির্বচনীয় সুখ লাভ হয়, দশখানা অলঙ্কার পরিলে তাহার শতাংশের একাংশের একাংশ সুখও পাওয়া যায় না। অতএত শরীর-শোভন অলঙ্কার ছাড়িয়া জ্ঞান-ভূষণ লাভের জন্য ললনাদের আগ্রহ বৃদ্ধি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি অলঙ্কারের টাকা দ্বারা জেনানা স্কুলের’ পক্ষে তার জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন।
বেগম রোকেয়ার উল্লিখিত উক্তিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুসলিম নারীমুক্তির প্রথম প্রবক্তা হিসেবে তিনি সুনিপুণ লেখনির বাস্তব রূপায়ণের জন্য নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করেছিলেন। নারীকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রাতিষ্ঠানিক স্তরে নারীর শিক্ষা বিস্তারে তিনি গভীর অন্ধকারে শিক্ষার মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে সমাজের ভবিষ্যৎ জননীদের গড়ে তোলার ভার নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৯১১ সালে তিনিই প্রথম মুসলিম বালিকাদের জন্য ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর পাশাপাশি মুসলিম নারীদের সংঘবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তাও তিনি উপলব্ধি করেন। মুসলিম নারীদের একতাবদ্ধ করে তাদের সামাজিক জীবন গঠন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দেশ ও জাতি সম্পর্কে সচেতনতাবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ নামে প্রথম ‘মুসলিম মহিলা সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতি ‘Calcutta Mohamedan Ladies Association’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। বেগম রোকেয়ার জীবনব্যাপী সাধনার অন্যতম ক্ষেত্র ছিল এই সমিতি। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যখন বালিকাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একাধিক সামাজিক প্রতিবন্ধকতা ও কুসংস্কার মুসলিম সমাজে বিরাজমান ছিল, সেই পরিবেশে বালিকাদের জননীদের জন্য সমিতি গঠন করা এবং সভা-সমিতির মাধ্যমে তাদের সমাজগঠনমূলক কাজে উৎসাহিত করা নিঃসন্দেহে বেগম রোকেয়ার অসীম সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।
দীর্ঘকালের কুসংস্কারের আঁধারে আচ্ছন্ন মুসলিম নারী সমাজ এতটাই অজ্ঞ ছিল যে, সমিতি কাকে বলে, সভা কাকে বলে—অনেক সময় সেটাও বেগম রোকেয়াকে বিভিন্ন প্রকার কষ্ট করে শেখাতে হয়েছে। তিনি একবার গল্পচ্ছলে শামসুন নাহারকে বলেছেন, অনেক সাধ্য সাধনার ফলে নানাপ্রকারে প্রলুব্ধ করে একটি শিক্ষিত মুসলমান পরিবারের মহিলাকে আঞ্জুমানের এক মিটিংয়ে আনা গেল। যথাসময়ে মিটিং শেষ হলে সমবেত মহিলারা গৃহে ফেরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। এ সময় নবাগতা মহিলা রোকেয়ার কাছে এসে জানতে চাইলেন, সভার নাম করিয়া বাড়ির বাহির করিলেন কিন্তু সভাত দেখিতে পাইলাম না।” বেগম রোকেয়া অনেক কষ্টে ওনাকে বুঝাতে পেরেছিলেন যে, তখনই যে কাজটি শেষ হয়ে গেল তার নামই সভা। রোকেয়া আরও বলেছেন, প্রত্যেকটি অধিবেশনের পর সভাকক্ষের দেয়ালগুলো পানের পিকে এমনভাবে রঞ্জিত হতো যে, প্রত্যেকবারই চুনকাম না করালে চলত না। স্বয়ং সভানেত্রী হতে আরম্ভ করে সমাগত মহিলাদের মধ্যে কেহই অনুভব করতেন না, যে সময় সভার কাজ চলছে, অন্তত সে সময়টুকু নিজ নিজ আসনে স্থির হয়ে বসে থাকা প্রয়োজন। সে যুগে তিনি কী ধরনের সভা করতেন তা কল্পনা করাও আমাদের পক্ষে কঠিন। ক্রমে ক্রমে রোকেয়ার চারপাশে একটি ক্ষুদ্র দল গঠিত হয়। ধীরে অতি ধীরে তারা বুঝতে পারলেন সভা সমিতি কাকে বলে, তারা দেখলেন নিজেদের দুর্গতি কতদূর চরমে পৌঁছেছে। তারা এ দুরবস্থার প্রতিকারের উপায় চিন্তা করতে শিখলেন। এক কথায় বলতে গেলে আঞ্জুমানে খাওয়াতিনের দিনের পর দিন চেষ্টার ফলে শত শত মুসলিম নারীর চক্ষু ফোটে।
কলকাতা মহানগরীতে ১৯৩৬ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মহিলা সম্মেলনের যে অধিবেশন হয় নারী আন্দোলনের ইতিহাসে তা স্থায়ী অক্ষরে লেখা থাকবে। আয়ারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, বিভিন্ন দেশের মহিলা কর্মীরা সমগ্র নারী জাতির কল্যাণ-কামনায় সমবেত হয়েছিলেন। এই সম্মেলনে আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম বা নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতি যথামর্যাদায় অংশগ্রহণ করে মুসলমান মেয়েদের কর্ম তৎপরতার পরিচয় দেন।
দেশের স্বাধীনতা চাইবার আগে রোকেয়া চেয়েছিলেন স্বদেশের নারী সমাজের স্বাধীনতা। সমাজে নারীর মর্যাদা ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। শুধু আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলামের কর্মকাণ্ডের মাঝে তার সমাজকর্ম সীমিত ছিল না। সমাজের মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে তিনি জীবনব্যাপী সমাজসেবা করে গেছেন। তিনি মুসলিম নারী কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম মহিলা সমিতির আজীবন সদস্য ছিলেন। স্ত্রী শিক্ষার প্রসার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘Bengal women’s education conference’-এর একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। নারী কল্যাণ বিশেষত নারীশিক্ষা বিষয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও বিভিন্ন মতামত প্রকাশের মাধ্যমে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছিল এই সম্মেলনের লক্ষ্য। ১৯২৬ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এক অধিবেশনে বেগম রোকেয়া সভানেত্রীর আসন অলংকৃত করে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ দান করেন।
বেগম রোকেয়া উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী সমাজকে অজ্ঞ ও অবরুদ্ধ রেখে দেশ তথা জাতির উন্নতি হতে পারে না। তাই নারী মুক্তি আন্দোলনে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিবেদিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে শত বাধা বিপত্তি তাকে তার কর্ম থেকে মুহূর্তের জন্যও বিচ্যুত করতে পারেনি। অসীম ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে তার অভীষ্ট লক্ষ্য নারী মুক্তির অভিপ্রায়ে তিনি নিজের সব সুখ, বিলাস ও অবসরকে বিসর্জন দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন, যা তার মৃত্যুর পরেও রুদ্ধ হয়ে যায়নি। পরে তার অনুসারীরা তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নারীমুক্তি আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। একজন সফল সমাজকর্মী হিসেবে এখানেই বেগম রোকেয়ার বিশাল সার্থকতা।
বেগম রোকেয়া তার বিভিন্ন লেখনিতে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা না করে ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের যেভাবে অবদমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। ধর্মীয় কুসংস্কার রুখে দেয়ার যৌক্তিক চেষ্টা করেছেন। শুধু টিয়া পাখির মতো করে পবিত্র কোরআন শরীফ পাঠ নয়; আরবি ভাষা শিখে পবিত্র কোরআন শরীফকে এর মূল অর্থসহ পূর্ণাঙ্গভাবে পাঠ করে অন্তর্নিহিতভাব উদ্ধার ও জানার জন্য তিনি বলেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, একমাত্র ইসলাম ধর্মই নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দান করেছে; ইসলাম ধর্মে নারীকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার দেয়া হয়েছে; স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। ‘মাতার পদতলে স্বর্গ’ বলা হয়েছে। আমাদের রাসুলুল্লাহ বলেছেন, তালাবুল ইলমি ফরীজাতুন, আলা কুল্লি মুসলিমিন ওয়া মুসলিমাতিন। অর্থাৎ সমভাবে শিক্ষা লাভ করা সমস্ত মুসলিম, নর ও নারীর অবশ্য কর্তব্য। দৃঢ়চেতা রোকেয়া প্রতিকূল সমাজের মধ্যে থেকেও আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারীর উন্নয়নের ধারায় কর্মের যে স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন তাও দিনে দিনে প্রখর হতে প্রখর হয়ে বয়ে চলছে। রোকেয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশেও নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার সুরক্ষায় কত শত সরকারি-বেসরকারি দপ্তর সংস্থা, সংগঠন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—সরকারি পর্যায়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থা এবং জয়িতা ফাউন্ডেশন।
বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত সমিতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ মহিলা সমিতি। এই সমিতি সমাজের অসহায় অনগ্রসর নারীদের জীবন দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা বিশেষ করে বিনামূল্যে ব্রেস্ট ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থাসহ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সমিতি প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজনের মাধ্যমে নারীদের আয়বর্ধক কার্যক্রমে সহায়তা করে। এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, নারী মৈত্রী কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামসহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও অনেক সংগঠন। আর এর কৃতিত্ব নারী জাগরণের অগ্রদূত, সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার, এ কথা বললে নিশ্চয়ই অত্যুক্তি হবে না।
সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং সাবেক সিনিয়র সচিব
পিআইডি নিবন্ধ