সমুদ্রপথে জলদস্যু নতুন আতঙ্ক

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকান দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাচ্ছিল। এ সময় জাহাজটিতে অবস্থান করছিলেন ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিক।

জলদস্যুদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে

জলদস্যুদের লক্ষ্য থাকে মূল্যবান জিনিসপত্র ও মালামাল চুরি। কিন্তু যখন বড় জাহাজ দখল করে, তখন বুঝে নিতে হবে তাদের প্রত্যাশাও বড়। দখলে নেয়া জাহাজটিকে উপকূলে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জায়গায় নিয়ে যাবে। দু-একদিন পর জাহাজ কোম্পানির কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করবে এবং দরকষাকষি করে সমঝোতা হলে তারা নাবিকদের মুক্তি দিতে পারে।

জলদস্যুদের লক্ষ্য হলো মুক্তিপণ আদায় এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট। নাবিকদের ক্ষতি করা তাদের লক্ষ্য নয়। যদিও জলদস্যুরা এতটা মানবিকও নয়। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জাহাজ ছিনতাই হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ছিনতাই হয় একই কোম্পানি কবির গ্রুপের জাহাজ ‘জাহান মণি’। তিন মাস জলদস্যুদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষির পর বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণের টাকা দিয়ে (প্রায় ৪ মিলিয়ন) মুক্ত হয়েছিল জাহাজটি। তাই চিন্তিত হওয়ার কোনো দরকার নেই। তার নাবিকদের সাথে কি করতে পারে? তারা জিম্মিদের খুব অল্প পরিমাণ খাবার ও পানীয় সরবরাহ করবে। এর থেকে বড় বেশি যেমন শারীরিক নির্যাতন কিংবা আঘাত বা বড় কোনো ক্ষতি করার আশঙ্কা খুবই কম। তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণ দিলে দিলই নাবিক ও জাহাজকে মুক্ত করে  দেবে। তাই ভেঙে না পড়ে, ধৈর্য ধরতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

জাহাজ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের নির্দেশনাবলি অমান্য করার সুযোগ নেই। জাহাজ ও নাবিকদের যেন নিরাপদে উদ্ধার করা যায় এবং তাদের যেন কোনো প্রকার ক্ষতি না হয়, সে অনুযায়ী জলদস্যুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে।

জিম্মি নাবিক ও অন্যদের করণীয়

১. শান্ত থাকুন এবং জলদস্যুদের নির্দেশনাবলি মেনে চলুন। আপনার নিরাপত্তা ও জাহাজের অন্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলদস্যুদের নির্দেশনা মেনে চলা অপরিহার্য; ২. একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য কর্তৃপক্ষ ও এলাকার অন্যান্য জাহাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন; ৩. সম্ভব হলে নিজেকে নিরাপদ স্থানে লক করুন ও অন্য ক্রু সদস্যদের সাথে রাখুন; ৪. জলদস্যুদের প্রতিরোধ কিংবা মোকাবিলা করার চেষ্টা করবেন না কারণ এতে সহিংসতা আরো বিপদের দিকে নিয়ে যেতে পারে; ৫. জলদস্যুদের দাবি এবং পরিস্থিতি সমাধানে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করতে পারে এমন তথ্য এবং অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক বিবরণ সম্পর্কে যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন; ৬. পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে দ্রুত কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

জলদস্যুর আক্রমণ এড়াতে করণীয়

১. জলদস্যু কার্যকলাপের জন্য পরিচিত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিহার করুন এবং এসব এলাকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চ স্তরের সতর্কতা অবলম্বন করা; ২. নিরাপদ রুট ব্যবহার করুন: জলদস্যু আক্রান্ত ঝুকিপূর্ণ এলাকা এড়াতে জাহাজগুলোকে সতর্কতার সহিত তাদের রুট পরিকল্পনা করা উচিত এবং মনোনীত শিপিং লেনগুলো দিয়ে চলাচল করা উচিত; ৩. গতি ও চলাচল: জলদস্যুরা সাধারণত ধীরগতির জাহাজগুলোকে টার্গেট করে। ‘এমভি আবদুল্লাহ’ পণ্যবাহী জাহাজ হওয়ায় এটার গতি ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২ নটিক্যাল মাইল। তাই জলদস্যুদের নৌকা বা স্পিডবোটকে এড়াতে জাহাজগুলোকে দ্রুতগতি বৃদ্ধি ও চলাচলে সক্ষম হওয়া উচিত; ৪. জলদস্যু আক্রমণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও কাছাকাছি জাহাজগুলোকে সতর্ক করার জন্য কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা উচিত; ৫. জলদস্যু বিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করা: জাহাজকে জলদস্যুদের বোডিং থেকে বিরত রাখতে শারীরিক বাধা যেমন রেজার তার, জাহাজের চারদিকে জালি কাটা, ডামি বা পুতুল, ফায়ার স্প্রে, আর্ম গার্ড, অ-প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে; ৬. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার: জাহাজগুলোতে রাডার ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমের আওতায় আনা উচিত, যাতে সম্ভাব্য হুমকিগুলোকে তাড়াতাড়ি শনাক্ত ও এড়িয়ে যাওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে; ৭. জলদস্যুদের জাহাজে প্রবেশে বাধা দেয়ার জন্য জাহাজের দরজা, হ্যাচ ও জানালার মতো অ্যাক্সেস পয়েন্টগুলোকে সুরক্ষিত করা উচিত; ৮. জলদস্যু আক্রমণের প্রতিক্রিয়া ও ক্রু সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদ্ধতিসহ জাহাজগুলির একটি সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা পরিকল্পনা থাকা উচিত।

 

 

সংগীত কুমার

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়