রিয়াদ হোসেন: সার্স ভাইরাসের ডেল্টা ও ওমিক্রন ধরনের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিধিনিষেধের পালা। প্রায় ১৮ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় নিয়ে আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এবারের ওমিক্রনের বিধিনিষেধে বাজারঘাট, রেস্তোরাঁ, অফিস-আদালত ও পর্যটনকেন্দ্রে পরিপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা না এলেও রয়েছে বিধিনিষেধ। মাস্কের ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার জন্য মূলত জোর দেয়া হয়েছে এ পদক্ষেপে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ঘরবন্দি থেকে হাঁপিয়ে উঠলেও সে সময়টাতে প্রকৃতি ফেলেছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস। সমুদ্রের নীল ঢেউয়ে খেলছিল প্রাণিকুল, বাতাসে কমেছিল দূষণের মাত্রা এবং রাস্তায় ছিল না শব্দদূষণ। সবমিলে প্রকৃতি যেন নিজস্বতায় ভরিয়ে তুলেছিল নিজের ঘর-সংসার। তবে আবারও শুরু হয়েছে কার্বন নিঃসরণ, হর্নের শব্দ আর সমুদ্রসৈকতে মানুষের আনাগোনা। নয়নাভিরাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত দেশের কক্সবাজারে আসছেন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পারায় ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম চাওয়া-পাওয়ার কেন্দ্র হলো এই সমুদ্রসৈকত। কিন্তু গতানুগতিক ধারায় মানুষের কোলাহল, সৈকতে চলা বিনোদনকেন্দ্রিক যানবাহন আর পর্যটকদের ব্যবহার করা প্লাস্টিক ও পলিথিনের প্রভাবে এ সৌন্দর্যে ভাটা পড়ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো প্রকৃতির জলরাশির এমন আওয়াজ আর শুনতে পাওয়া যাবে না, হারিয়ে ফেলবে সমুদ্রসৈকত তার নিজস্ব ঐতিহ্য। এজন্য পর্যটকদের ব্যবহার করা এসব প্লাস্টিক, পলিথিন, চিপসের প্যাকেটসহ অনান্য বর্জ্যরে বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে মাথায় নিতে হবে। এখনই সতর্ক হতে হবে ছোট ছোট এসব বিষয় নিয়ে এবং নিজেদের সচেতনতা বাড়িয়ে পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করতে হবে আমাদেরই।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের অবাধ ব্যবহারে মানুষ থেকে শুরু করে প্রাণিকুল ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়েছে। পরিবেশের ওপর প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে এসব ব্যবহারকারীর ধারণাই নেই। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের এক জরিপে উঠে এসেছে গেছে, রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, উড়োজাহাজ-বিমানবন্দর ও সুপারশপ থেকে সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিক বেশি আসছে। এর মধ্যে বেশি আসে রেস্তোরাঁ থেকে। সহজেই বোঝা যায়, সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কী পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করেন। তাদের ব্যবহার করা এসব পলিথিন ও প্লাস্টিক সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমরা দেখেছি, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী ও দরিয়ানগর থেকে শুরু করে হিমছড়ি সৈকত এলাকা পর্যন্ত পুরো এলাকায় রয়েছে বর্জ্যরে স্তূপ। সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের তালে একের পর এক বর্জ্য ভেসে আসছে। এসব বর্জ্যরে মধ্যে শুধু প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য নয়, ভেসে এসেছে ছেঁড়া নাইলনের জাল এবং শত শত বিভিন্ন ধরনের মদের বোতল। এতেই সহজে অনুমান করা যাচ্ছে, সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে পর্যটকরা কীভাবে এই পরিবেশকে দূষণ করে চলেছেন। তাই প্লাস্টিক বর্জ্যরে ফলে পরিবেশে যেন দীর্ঘমেয়াদি বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধি ছাড়া আর কোনো উপায় আমাদের সামনে খোলা নেই। এজন্য এখানে আসা অসংখ্য পর্যটককে সচেতন করতে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে কিছুটা হলেও সম্ভব হবে পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার আইন করেছিল। হাইকোর্ট একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে সেটি কিছু দিনের বেশি কার্যকর হয়নি। মাঝে মাঝে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার মাধ্যমে কিছু হোটেল মালিক ও আবাসিক হোটেলে জরিমানা করছে। কিন্তু কঠোর শাস্তি না দেয়ায় এগুলো অবাধে বাড়ছে। এজন্য যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার একেবারেই আবশ্যক নয়, সেগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে। আর যেসব পণ্যের জন্য কিছু সময় প্রয়েজন, সেগুলো ধাপে ধাপে ব্যবহার কমিয়ে একসময় সেগুলোও বন্ধ করলে কোনো প্রভাব পড়বে না সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় কাজে। আর সৈকতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনা করে মাঝেমধ্যে এর বিরুদ্ধে শুধু অভিযান চালালে হবে না, এটা নিয়মমাফিকভাবে পরিচালনা করতে হবে।
বিশেষ করে এখানে আসা পর্যটকদের ব্যবহার করা প্লাস্টিকের বোতল নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে সচেতন করে তুলতে হবে। আর কাগজের প্যাকেট আর পাটব্যাগের ব্যবহার বাড়াতে সাধারণ জনগণের মাঝে এর উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে টিভি বা পত্রিকায় প্লাস্টিক ও পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন আয়োজনও করা যেতে পারে। সর্বোপরি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অন্তত নিজেদের জন্য হলেও সমুদ্রসৈকতকে রক্ষায় আমাদেরই সচেতন হতে হবে।
শিক্ষার্থী
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা