মো. রবিউল আউয়াল রবি, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় ভারতের সীমান্তঘেঁষে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী গারো পাহাড়। এখানে বর্তমানে তৈরি করা হচ্ছে গাবরাখালী গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্র। ময়মনসিংহের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমানের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ পিকনিক স্পট মন কেড়েছে দর্শনার্থীদের। এখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করেছে এই গারো পাহাড় ও পর্যটন কেন্দ্রের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তবে কডিড-১৯-এর প্রভাব পড়েছে এখানে। আর লকডাউনের কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে স্পটটি।
চারপাশে রয়েছে সমতল পরিবেষ্টিত পাহাড়। পাখির কলরব আর সোনালি সূর্যের সূর্যাস্তক্ষণ দেখে দারুণ সময় কাটানো যায় এখানে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কিছু অংশ দেখা যায় এই গারো পাহাড়ের ওপর থেকে। সবুজের সমারোহ ও গজারি বাগানের মনোহর দৃশ্য দেখে দর্শনার্থীদের চোখ ফেলা দায়। পাহাড়ের মাঝখানে নিচু জমি আছে, যা পানিতে ভরে গেলে লেক মনে হয়। নিচু জমিগুলোয় বোরো মৌসুমে ভারত থেকে আসা পানি দিয়ে বোরো চাষাবাদ করা হয়।
১২৫ একর এলাকাজুড়ে ছোট-বড় ৬৭টি পাহাড় নিয়ে গঠিত এই গাবরাখালী পাহাড়। পর্যটন কেন্দ্রটির পাহাড়গুলো প্রায় ৭০ থেকে ১৫০ ফুট উঁচু। এর ওপর থেকে দেখা যায় ভারত সীমান্ত। এখানের পাহাড়গুলোর রয়েছে বাহারি নামÑচিতাখলা টিলা, যশুর টিলা, মিতালী টিলা, বাতাসী টিলা প্রভৃতি। স্বাধীনতা-পূর্বে গাবরাখালী এলাকায় আদিবাসী হাজং ও বানাই জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। বর্তমান এখানে মুসলমান, হিন্দুসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। গাবরাখালীর পাশে ভারতীয় সীমানা। তাই এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভারতেরও প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য। দেখা যায় দেশটির মানুষদের।
এই গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সব বয়সী মানুষকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও পর্যটকরা আসেন এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। গাবরাখালীর এক পাহাড়ে মাহবুব শাহ নামে একটি মাজার রয়েছে, যা দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মো. মাহবুব আলম নামের এক ব্যক্তির মাজার এটি। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি বিহারি ছিলেন। সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্বে গাবরাখালীতে এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি গাবরাখালীর পাহাড়গুলোয় গরু চরাতেন। তিনি সবসময় তার কাঁধে গরুর রশি ঝুলিয়ে রাখতেন।
জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে প্রায় ৬৮ একর জমি নিয়ে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চলছে এই পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গাবরাখালী পর্যটন ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়। এ পর্যটন কেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের অনেক অসহায়-দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবেন। হবে কর্মসংস্থান।