Print Date & Time : 11 August 2025 Monday 12:13 am

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মন্দার পথে হংকং

শেয়ার বিজ ডেস্ক : পাঁচ মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হংকং। এ বিক্ষোভের জেরেই আর্থিক মন্দার পথে এগিয়ে চলেছে হংকং। চীনের অধিভুক্ত বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারি লাম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বিক্ষোভের কারণে চলতি বছর অর্থনীতিতে রেকর্ড নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগের দিন অর্থসচিব পল চ্যানও বলেছিলেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জেরে যা ক্ষতি হয়েছে, তাতে চলতি অর্থবর্ষে প্রস্তাবিত আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে বলে মনে হয় না।

গতকাল ক্যারি লাম বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির ওপর আঘাতটা উদ্বেগজনক। অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক। এর অর্থ আমাদের অর্থনীতি মন্দায় প্রবেশ করেছে। সেক্ষেত্রে চলতি অর্থবর্ষে নির্ধারিত শূন্য থেকে এক শতাংশের আর্থিক বৃদ্ধির হার বজায় রাখা মুশকিল। পুরো অর্থবর্ষের বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হলেও আমি অবাক হব না।’

এর আগের দিন একটি ব্লগে পল চ্যানও একই কথা বলেছিলেন। প্রধান নির্বাহী ও অর্থসচিবের এ সতর্কবার্তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ। বিক্ষোভের সূত্রপাত হংকংয়ের একটি প্রত্যর্পণ বিল নিয়ে, যাতে বলা হয়েছিল গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের চীনের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে গিয়ে বিচার করা হবে। এতে হংকংয়ের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং এক দেশ দুই নীতি ব্যবস্থা ক্ষুণœ হবে বলে পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। বিল প্রত্যাহারের পরও সেই বিক্ষোভ চলছে। গত রোববারও মুখোশধারী প্রতিবাদীরা বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে লক্ষ করে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছে, পাল্টা কাঁদানে গ্যাস এবং জলকামান ছুড়েছে পুলিশ। সরকারি সূত্রে খবর, ক্রমাগত এই অশান্তির জেরে শুধু অক্টোবরেই হংকংয়ে পর্যটকসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। দোকান ও শপিং মল বন্ধ থাকায় ক্ষতি হয়েছে খুচরা ব্যবসায়। ভাঙ্চুরের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মেট্রো পরিষেবা ও ব্যাংকও।

এ পরিস্থিতিতে লামের দাবি, ‘আপনারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। শিল্প-ব্যবসা চলতে দিন। যুক্তিসংগত আলোচনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন।’ এর আগেও সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় শপিং গন্তব্য হংকংয়ে পর্যটক কমছে এবং খুচরা বিক্রি কমে যাচ্ছে। টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। এতে দেশটির অর্থনীতি গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সরকারি উপাত্তে দেখা গেছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে হংকংয়ের অর্থনীতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক চার শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। দেশটির ব্যস্ততম বিমানবন্দর আন্দোলনের একপর্যায় বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রধান শপিং মলগুলো অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

এশিয়ার আর্থিক কেন্দ্রটি, যেখানে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বন্দর রয়েছে, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ এবং এক দশকের মধ্যে চীনের অর্থনৈতিক শ্লথগতিতে সেটি চাপে রয়েছে। হংকং শহর কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার জানিয়েছে, তারা ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে শূন্য থেকে এক শতাংশে এনেছে। এর আগে এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল দুই-তিন শতাংশ।

গত প্রান্তিকে আশঙ্কার চেয়েও বেশি কমেছে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। এ প্রান্তিকে জিডিপি দশমিক তিন শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আগের প্রান্তিকেও জিডিপি কমেছিল। টানা দুই প্রান্তিকে জিডিপি সংকুচিত হওয়ায় দেশটির মন্দার খুব কাছাকাছি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।