Print Date & Time : 29 July 2025 Tuesday 3:51 pm

সরকারি অফিসে কর্মসময়  নিশ্চিত করুন

ঊর্ধ্বতন হোক আর অধস্তন হোক, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা যথাসময়ে অফিসে আসেন না; আবার প্রস্থানের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এমনও প্রচলিত যে, কেউ এতই অনিয়মিত যে, তারা কখন আসেন এবং কখন অফিস ত্যাগ করে তা বুঝে ওঠাও কষ্টকর হয়। এ ধরনের অনিয়মিতভাবে অফিসে আগমন ও অফিস থেকে প্রস্থান করা সরকারি অফিস নিয়মের পরিপন্থি; এটি অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। কাজ না করেই বেতন, সুযোগ-সুবিধা নেয়া নৈতিকতারও পরিপন্থি।

সরকারি কর্মচারীরা যথারীতি কর্মস্থলে আসা-যাওয়া করবেন; এটি প্রত্যাশিত। এরপরও সরকারি কর্মকর্তাদের যথাসময়ে অফিসে আগমন ও অবস্থান নিশ্চিতকরণে পরিপত্র জারি করতে হয়। ২০ বছর আগে যেমন ফাঁকিবাজ দায়িত্বহীন সরকারি কর্মচারী ছিল এখনও আছে। যেমন ৬ এপ্রিল ২০০৩ তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন জারি করা একটি চিঠির ভাষ্য: সরকারের সেবাগ্রহণকারী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবারকে সভাবিহীন দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন সচিব ছাড়া (সচিব প্রয়োজনে পরিদর্শন কাজে বাইরে যেতে পারেন) অন্য সব কর্মকর্তার সার্বক্ষণিকভাবে নিজ অফিস কক্ষে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা সন্তোষজনকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না।

পরবর্তী সময় ২৭ আগস্ট ২০১৯ এবং ১০ মার্চ ২০২১ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে একই ধরনের পরিপত্র জারি করতে হয়। এ নির্দেশনা বারবার উপেক্ষিত হয়েছে; আবারও পরিপত্র জারি করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট সময় সকাল ৯টায় অফিসে এসে কমপক্ষে ৪০ মিনিট অর্থাৎ সকাল ৯টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত অফিসকক্ষে অবস্থান করার তাগিদ দিয়ে ফের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়।

সহযোগী একটি দৈনিককে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখার দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব আনার কলি মাহবুব বলেছেন, আগে থেকেই নির্দেশনা ছিল। এখন নতুন করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে নতুন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে পারেন। জানা সত্ত্বেও কেউ নির্দেশের ব্যতিক্রম করলে, তার বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সময়মতো কর্মস্থলে না আসা গর্হিত অপরাধ। যারা অন্যকে আইন পরিপালনে অনুপ্রাণিত বা বাধ্য করবেন; তারা কাজে ফাঁকি দিলেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন দৃষ্টান্তও আছেন, কর্মস্থলে অলস সময় কাটান অথচ ব্যস্ততার অজুহাতে সেবাগ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। কেউ পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে; আর কেউ ফাঁকি দিয়ে ছড়ি ঘোরাবে; এটি ন্যায্যতার কথা হলো না। এমন সংস্কৃতি কর্মস্থলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট করে। এ থেকেই শুরু হয় অসন্তোষ, দলাদলি।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের উচিত চাকরিবিধি যথাযথ মেনে চলা। নির্দিষ্ট সময় কর্মস্থলে অবস্থান করা চাকরির অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা কাম্য নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সময় মেনে কর্মস্থলে অবস্থান করলে নিয়ন্ত্রণাধীন সহকর্মীরাও সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে, অবস্থান করতে অনুপ্রাণিত হন। এতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং প্রজাতন্ত্রে সার্বিক কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। কর্মস্থলে দেরিতে আসা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত, আমরা এটি বলতে চাই না।  স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন বলেই প্রত্যাশা।