বিদ্যুৎ উৎপাদন

সরকারি কেন্দ্রের দ্বিগুণ ব্যয় আমদানি ও বেসরকারিতে

ইসমাইল আলী: বেসরকারি খাতের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বর্তমানে প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ আসছে। আদানির বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ায় ভারত থেকে আমদানিনির্ভরশীলতাও বেড়েছে। তবে এ দুই খাতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ছে সরকারি খাতের চেয়ে অনেক বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও অন্যান্য সরকারি কেন্দ্রের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় পড়ছে বেসরকারি কেন্দ্র ও আমদানিতে।

২০২৩-২৪ অর্থবছর দেশের চাহিদা মেটাতে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩৯৩ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় হয় ১১ টাকা ছয় পয়সা। এর মধ্যে আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কিনতেই গড়ে ১৩ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। এছাড়া আমদানিতে এ ব্যয় ছিল সাড়ে ১১ টাকার বেশি। যদিও গত অর্থবছর বিদ্যুৎ বিক্রির গড় মূল্য ছিল পাইকারিতে ছয় টাকার মতো। অর্থাৎ বেসরকারি খাত ও আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে।
পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর সংস্থাটির নিজস্ব কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এক হাজার ৫৮৩ কোটি ছয় লাখ ২৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় পড়ে প্রায় আট হাজার ৫২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় ৫৩১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

এছাড়া বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল চার হাজার ৩৪৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ব্যয় পড়ে ১৩ হাজার দুই কোটি ৩২ লাখ টাকা। এতে পিডিবির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে আট টাকা ৪৭ পয়সা। ২০২২-২৩ অর্থবছর পিডিবির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এক হাজার ৭৪৩ কোটি ২৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে জ্বালানি ব্যয় পড়ে সাত হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা এবং পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় ৩৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় ছিল পাঁচ হাজার ১৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ব্যয় পড়ে ১৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এতে পিডিবির কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে সাত টাকা ৬৩ পয়সা।

এদিকে পিডিবি ছাড়া অন্যান্য সরকারি কোম্পানির কেন্দ্রগুলোয় ২০২৩-২৪ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এক হাজার ৫৬৭ কোটি ৮১ লাখ ৭৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট ব্যয় পড়ে ১১ হাজার ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ কেন্দ্রগুলোয় গড় ব্যয় পড়েছে সাত টাকা আট পয়সা, যা সবচেয়ে কম। ২০২২-২৩ অর্থবছর এ কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এক হাজার ৫৭৪ কোটি ২৩ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে মোট ব্যয় পড়ে ১০ হাজার ৭৮৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড় ব্যয় ছিল ছয় টাকা ৮৫ পয়সা।
অন্যদিকে বেসরকারি খাতের মধ্যে আইপিপিগুলোয় গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে চার হাজার ৩৫৯ কোটি ২৬ লাখ ৪৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ৫৭ হাজার ৩৭৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে ব্যয় পড়েছে ১৩ টাকা ১৬ পয়সা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছর আইপিপিগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় চার হাজার ৩৬ কোটি ২৩ লাখ ছয় হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয়েছিল ৫৯ হাজার ২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে ব্যয় পড়েছিল ১৪ টাকা ৬২ পয়সা।

বেসরকারি রেন্টালের সংখ্যা কমে আসায় এ খাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহও অনেক কমছে। গত অর্থবছর এ খাত থেকে বিদ্যুৎ এসেছে মাত্র ২০১ কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় দুই হাজার ৬০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। গড়ে ব্যয় পড়ে ১২ টাকা ৯০ পয়সা। এর আগের অর্থবছর এ ব্যয় ছিল ১২ টাকা ৫৩ পয়সা। ওই অর্থবছর রেন্টাল কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ আসে ২৯৮ কোটি ৭১ লাখ ১৩ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ৭৪৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এর বাইরে আদানি যুক্ত হওয়ায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি অনেকটাই বেড়েছে। এ খাত থেকে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ এসেছে এক হাজার ৬৮১ কোটি ৪৮ লাখ ২৯ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় ১৯ হাজার ৪১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুৎ আমদানিতে গড়ে ব্যয় পড়েছে ১১ টাকা ৫৪ পয়সা। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছর এ ব্যয় ছিল আট টাকা ৭৭ পয়সা। ওই অর্থবছর বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়েছিল এক হাজার ৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৬৮ হাজার কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর ব্যয় হয়েছিল ৯ হাজার ২২৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উচ্চ ব্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল অত্যধিক জ্বালানি ব্যয়। গত অর্থবছর পিডিবির গড় জ্বালানি ব্যয় ছিল পাঁচ টাকা ৮৩ পয়সা এবং অন্য সরকারি কেন্দ্রে তিন টাকা ৭৩ পয়সা। তবে বেসরকারি খাতের কেন্দ্রগুলোর মধ্যে গড় জ্বালানি ব্যয় ছিল আইপিপিতে সাত টাকা ৪৫ পয়সা ও রেন্টালে ১০ টাকা দুই পয়সা। আর আমদানির ক্ষেত্রে গড় জ্বালানি ব্যয় পাঁচ টাকা ৭৬ পয়সা।

অন্যদিকে পিডিবির গড় স্থায়ী ব্যয় মাত্র দুই টাকা ৫০ পয়সা এবং অন্য বেসরকারি কেন্দ্রে গড়ে তিন টাকা আট পয়সা। তবে বেসরকারি খাতে গড় স্থায়ী ব্যয় তথা ক্যাপাসিটি চার্জ আইপিপিতে পাঁচ টাকা ২১ পয়সা ও রেন্টালে দুই টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ আইপিপির ক্যাপাসিটি চার্জও ছিল উচ্চ। আমদানির ক্ষেত্রে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পাঁচ টাকা তিন পয়সা। তবে আদানির ক্ষেত্রে এ ব্যয় সাত টাকা ১৩ পয়সা।