Print Date & Time : 3 September 2025 Wednesday 1:28 am

সরকার এত দিন মিথ্যাচার করেছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যরাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সরকার এত দিন মিথ্যাচার করেছে, রিজার্ভে এত টাকা আছে, এত ডলার জমা আছে যে কোনো চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু এখন রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আইএমএফ থেকে কঠিন শর্তে সরকার ঋণ নিচ্ছে যার ফলেই জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি।’

গতকাল শনিবার বেলা ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদলের জেলা সভাপতি নুরে আলমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এই সমাবেশ করে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকার শুধু যে বিরোধী দলের ওপর আক্রমণ করছে তা নয়, সরকার তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যে আকাশ প্রমাণ দুর্নীতির মধ্য দিয়ে দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, এর আরেকটি প্রমাণ মধ্যরাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ গুণ বাড়িয়ে দেয়া।’

তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে দেশের সমগ্র অর্থনীতির ওপর। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল-ডাল-আটা-তেলের দাম আবার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কে? আমাদের সাধারণ মানুষÑযারা দিন আনে দিন খায়। এভাবে বারবার বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

আইএমএফ থেকে সরকারের ঋণ চাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি ডলার। কারণ এত দিন ধরে যে মিথ্যাচার করে এসেছে, রিজার্ভে তাদের এমন টাকা আছে, এত ডলার জমা আছে যে তাদের কোনো চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু আজকে রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, এডিবি ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলছে, কোথাও সাবসিডি (ভর্তুকি) না দিতে ও তেলের ওপর ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করতে; যেসব পণ্যের ওপর ভর্তুকি দেয়া আছে, সেসব পণ্যের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে। ফলে আজকে এটা করা হচ্ছে।

মানুষ এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেÑউল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, মানুষ এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছে, মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই সরকার ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। তারা আজকে বাংলাদেশের সব অর্জন কেড়ে নিচ্ছে। সে জন্য এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়াটাই হচ্ছে একমাত্র দেশপ্রেমিকের কাজ।’

অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার বলে চক্রান্ত হচ্ছেÑএমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চক্রান্ত তো করেন আপনারা। বারবার বলেছি, কী চক্রান্ত করছি বলেন। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব।’ এ লক্ষ্যে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানান তিনি।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুর রহিমের আত্মত্যাগ যাতে বৃথা না যায়, সে জন্য নেতাকর্মীদের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমার শেষ কথা, হটাও হাসিনা, বাঁচাও দেশ, জনগণের বাংলাদেশ, টেকব্যাক বাংলাদেশ।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভোলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে নাকি অস্ত্র ছিল। এত বড় টাটকা মিথ্যাচার। তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল? যদি থাকত তাহলে প্রযুক্তির এই যুগে তা গণমাধ্যমে আসত। আপনারা বিএনপিকে খুন করার যে লাইসেন্স পুলিশকে দিয়েছেন, সেই অস্ত্র দিয়েই নুরে আলম, আবদুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার পঙ্ক্তি আবৃত্তির পর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, এই সরকারকে একসঙ্গে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই তারা লেজ গুটিয়ে পালাবে। ছাত্রদলের আরেক সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘এদের (ক্ষমতাসীন দল) বিশ্বাস করা যাবে না। যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে এই সরকারকে হটানো যাবে না।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, ‘আর জানাজা পড়তে চাই না।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেনÑবিএনপির নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির, ফজলুল হক, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী, আমিরুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া, শহিদুল ইসলাম, হাবিবুর রশীদ, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম, আমিনুল হক প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম। সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম।