সরকার পদক্ষেপ নেয় জনগণ নিঃস্ব হওয়ার পর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পদক্ষেপ নেয় কিন্তু সেটা জনগণ নিঃস্ব হওয়ার পর। এহসান গ্রুপ, ই-ভ্যালিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে গতকাল বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এ সময় দেশের গ্রামপর্যায়ে সুদ কারবারিদের তালিকা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটটি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন রিটকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক।

শুনানিকালে আদালত বলেন, সরকার তো পদক্ষেপ নিচ্ছে, কিন্তু সেটা কখন? যখন আমি (গ্রাহক) নিঃস্ব হয়ে গেলাম, আমার রেমিডিটা (প্রতিকার) কোথায়। আমার টাকাটা নিয়ে গেলো, আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সে থানায় যাবে, জেলে যাবে, যাক। কিন্তু আমার টাকাটা যে নিয়ে গেল সেটা কোথায়? আমরা মামলা করার পর চোর ধরা পড়ছে। চুরি তো ঠেকানো যাচ্ছে না। আদালত বলেন, আমার বাড়ি কেন অরক্ষিত? আমার বাড়ি মানে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ দরজা-জানালা বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমাবে, কিন্তু আমার ঘর কেন অরক্ষিত। মানুষের টাকা কেন লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বাইরে? এগুলো বন্ধ করা কাদের দায়িত্ব? এটা আমরা দেখতে চাই। আমরা এটা পরীক্ষা করতে চাই।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক বলেন, ‘সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। এহসান গ্রুপের ওই লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ই-ভ্যালির ওই লোককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, তাদের আইনের শাসন, সবকিছু সুপ্রতিষ্ঠিত করা সরকারের দায়িত্ব। সেখানে সরকার ঠিকমতো কাজ করছে কি নাÑআমরা দেখব।’ পরে মামলাটি শুনানির জন্য আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।’

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে বিভিন্ন গ্রাম-অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে বলা হয়, দেশের প্রতিটি এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতির নামে সুদের ব্যবসা চলছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ঋণ দেয়ার নামে উচ্চহারে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব ব্যবসার কোনো নিবন্ধন নেই। সাধারণ মানুষ এসব সুদ কারবারিদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা বা মাসে সুদ হিসেবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনিবন্ধিত এসব সমবায় সমিতি ও সুদকারবারি থেকে ঋণ নিয়ে সুদের বোঝা টানতে টানতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখের সামনে তারা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই সারা দেশের অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।