কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড

সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি আমদানিনির্ভর 

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে প্রতি বছর বাড়ছে আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। এসব খাতে পুরো বছরে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার। যার বিপরীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সরবরাহ করে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনসি গ্যাসের মাধ্যমে ৯৯ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় এ নির্ভরশীলতা বেড়েছে। আর আমদানিতে জঠিলতা বাড়লে সংকটে পড়তে পারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গ্যাস ব্যবহারকারী।

কেজিডিসিএল সূত্রে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রামে আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ছয় লাখ গ্রাহকের কাছে তিন হাজার ৯৫ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় মাত্র ১০ মিলিয়ন ঘনমিটার। আর বাকি তিন হাজার ৫২ মিলিয়ন ঘনমিটার বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়; যা গত অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ১০২ মিলিয়ন ঘনমিটার। অর্থাৎ ৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সংগ্রহ কমেছে।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাসভিক্তিক আমদানির পরিমাণ ছিল জুন মাসে ২৬৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ২৭৫ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট, এপ্রিলে ২৭০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট, মার্চ মাসে ২৭৭ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট, জানুয়ারি মাসে ২৩৯ দশমিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট, ডিসেম্বর মাসে ২৩৪ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট, নভেম্বর মাসে ২৪২ মিলিয়ন ঘনফুট, অক্টোবর মাসে ২৭০ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সেপ্টেম্বর মাসে ২৪৬ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আগস্টে ২৬৮ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট এবং জুলাইয়ে ২৫৮ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, বর্তমানে কোম্পানির শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রমপুঞ্জিত গ্রাহক সংযোগ দাঁড়ায় মোট ছয় লাখ এক হাজার ৭০৩টি। তাদের গ্যাসের চাহিদার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বিপরীত বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। যদিও কয়েক বছর আগে মাত্র ১৭৮ থেকে ১৯০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করতে পারত। ২০১৮ সালের এলএনসি গ্যাস আমদানির পর থেকে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ বাড়তে থাকে।

চট্টগ্রামের কেজিডিসিএলের একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজকে বলেন, শিল্প খাতে প্রয়োজন অনুসারে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি না। আবার শিডিউলিং করে কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অথচ এ কঠিন সময়ে আমাদের সরবরাহ লাইন ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কারকানা চালু রাখা দরকার। তা না হলে মন্দা পড়ে সব শেষ হবে।

এ বিষয়ে ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম নাজের হোসাইন শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি আমদানিনির্ভর গ্যাস হওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ বেশি। কারণ নানা কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এছাড়া গ্যাস আমদানিতে বিপুল ডলার ব্যয় হচ্ছে। আমাদের উচিত ছিল গ্যাস কূপখননে মনোযোগী হওয়া। আমরা নাগরিক সমাজ সবসময় বলেছি, নতুন নতুন গ্যাস কূপ অনুসন্ধানের কথা। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে বাড়ছে ব্যয়।

এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদের দপ্তরের যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় তিনি অফিসে আসেননি। পরে তার ব্যবহƒত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) খায়রুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনিও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।