দেশের সংবিধান ও ধর্মীয় বিধান অনুসারে জুয়া স্পষ্টত নিষিদ্ধ। অপরদিকে নিষিদ্ধ কাজের প্রতিই মানুষের আগ্রহ থাকে সবচেয়ে বেশি। জুয়া মাদকের মতোই ভয়ংকর সর্বগ্রাসী নেশা। জুয়ার নেশায় আসক্তরা মা-বোন ও স্ত্রী-কন্যার স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সম্পদ বিক্রি করার মাধ্যমে জুয়া খেলে থাকেন। তাদের জুয়ার নেশা থেকে ফেরানো কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ। জুয়ার মাধমে সর্বস্ব হারানোর বহু নজির থাকলেও আমরা ভুল থেকে শিক্ষা নিই না। অপরজনের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে না পারায় একসময় নিজেও চরম ক্ষতির শিকার হতে হয়। মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটানোর অন্যতম মাধ্যম জুয়া। প্রশাসন থেকে জুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না জুয়া। উল্টো জুয়া খেলার মাধ্যম বাড়ছেই।
একসময় ক্রিকেট-ফুটবলসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা এবং ক্যাসিনোর মাধ্যমে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও স্মার্ট ফোনের সহজলভ্যতার যুগে মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলার হিড়িক পড়েছে তরুণদের মাঝে, যা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এনড্রয়েট ফোনে বিভিন্ন জুয়ার অ্যাপস ও জুয়ার ওয়েবসাইট থেকে অধিক লাভবান হওয়ার লোভ দেখিয়ে অ্যাপস ডাউনলোড করে খেলার আহ্বান জানানো হয়। বিভিন্ন নামে থাকা অ্যাপসগুলোর বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশি ব্যাংক এবং বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্টের সুযোগ দেখিয়ে টোপ দেয়ার ফলে তরুণরা মোবাইল জুয়ায় আকৃষ্ট হচ্ছে দিন দিন। এছাড়া জুয়ার বিভিন্ন কোম্পানি চ্যানেলগুলোতে অবাধ বিজ্ঞাপন প্রচার করায় জুয়া এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রীয় আইনে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট-ফুটবল লিগগুলো বাংলাদেশি চ্যানেলে ও ভিনদেশি চ্যানেলে দেখানোর সময় সেসব চ্যানেলগুলোয় জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হওয়ায় বাংলাদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশে বেকার সমস্যা প্রকট। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে জুয়ায় মত্ত হচ্ছে। বিদেশি ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে জুয়ায় অংশগ্রহণ করা সহজলভ্য হওয়ায় ঘরে বসেই বিভিন্ন অর্থ লেনদেনের মাধ্যম ব্যবহার করে জুয়া খেলছে তরুণ ও মধ্যবয়সীসহ সব বয়সের মানুষ। মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা বেশ কঠিন কাজ। কেননা অ্যাপসের মাধ্যমে কিংবা জুয়ার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই জুয়া খেলার কারণে কারা জুয়া খেলছে, কিংবা কারা সাধারণ গেমস কিংবা ফেসবুক ব্যবহার করছে, তা সহজে বোঝা সম্ভব নয়। মোবাইলে জুয়াড়িদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়েও বড় দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের। সন্তান কার সঙ্গে মিশছে, মোবাইলে সারাক্ষণ কী করছে, তা পর্যবেক্ষণে রাখার মাধ্যমে সন্তান যেন স্মার্টফোনের অপব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জুয়া খেলায় অভ্যস্ত ব্যক্তিদেরও বুঝতে হবে, এটি দেশীয় আইনে নিষিদ্ধ কাজ। ইসলাম ধর্মমতেও জুয়া খেলা হারাম। এর থেকে আয় করা অর্থও হারাম। হারাম আয়ে কখনোই উন্নতিসাধন করা যায় না। জুয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে। প্রয়োজনে যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখলে কিংবা মেলামেশা করলে জুয়ায় আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
যেহেতু জুয়ায় আসক্ত ব্যক্তিরা মাদকাসক্তের মতোই হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়, সেহেতু মোবাইল কিংবা অন্য কোনোভাবেই জুয়া খেলা হোক না কেন, তা বন্ধ করতে পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলো জুয়ার কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে কিংবা যে কোনো জুয়ার আসর ভেঙে দিয়ে মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সংবিধানে যেহেতু ‘জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’ মর্মে বলা আছে, সেহেতু সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ ও জুয়াড়িদের শাস্তি এবং বাংলাদেশে জুয়ার ওয়েবসাইট প্রদর্শন বন্ধ করাসহ স্পষ্ট আইন প্রণয়ন করার মাধ্যমে এনড্রয়েড প্লে স্টোরে থাকা সব ধরনের জুয়ার অ্যাপস এবং বাংলাদেশে দৃশ্যমান সব ধরনের জুয়ার ওয়েবসাইটের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে সরকারের আইটি সংস্থা কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশব্যাপী ওয়েবসাইট ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে জুয়ার যে ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা রোধ করতে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারলে মোবাইল জুয়াসহ সব ধরনের জুয়ার ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকা কঠিন কাজ হবে না।
জুবায়ের আহমেদ
শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম), কাঁটাবন, ঢাকা