সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের এক লাখ মেট্রিক টন আমদানি বেশি হয়েছে। পাশাপাশি সরকার শুল্ক কমিয়েছিল। তবুও বাজারের দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন সংকট।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশে সয়াবিন, পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজ আমদানি আগের চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে (১ জুলাই থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি) এ পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (১ জুলাই থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি) একই সময়ে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের এক লাখ মেট্রিক টন আমদানি বেশি হয়েছে। এছাড়া গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি। সয়াবিন বীজের আমদানিও বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে তিন লাখ টন, যা গত এক বছর আগে হয়েছিল এক লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন। এক মাসে বেশি সয়াবিন বীজ আমদানির রেকর্ড নেই। পাশাপাশি সরকার শুল্ক কমিয়েছিল। তারপরও সংকট না কাটায় গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দামপ্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়। তাতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৭৫ টাকা।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে, যার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। দেশীয় টিকে, সিটি, মেঘনা, বাংলাদেশ এডিবয়েল, বসুন্ধরা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও বীজ আমদানি করে তা থেকে তেল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ে। চট্টগ্রাম নগরের বড় বাজারগুলো চকবাজার, কাজীর দেউড়িসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক সময়ে যেখানে সব মুদিদোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়, সেখানে এখন সয়াবিন তেল খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। আর কিছু বড় দোকান থেকে পাঁচ লিটারের বোতল নিলে সাধারণত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) থেকে কিছুটা ছাড় পাওয়া যেত। এখন দিতে হচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন দোকানদার। অন্যদিকে বাড়তি চাহিদার সুযোগে খোলা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।
অক্সিজেন এলাকার সুপার শপ সুলতান মার্টেও স্বত্বাধিকারী শরিফ উদ্দিন আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, দুই লাখ টাকার বোতনজাত সয়াবিন তেলের অর্ডার করছি। কিন্তু দুদিন হয়ে গেল কোম্পানি ডেলিভারি দেয়নি। আর দেরিতে দিলেও সরবরাহ করছে চাহিদার তুলনায় অনেক অনেক কম পরিমাণে তেল। ফলে বাজারের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা বলেন, এখন আন্তর্জাতিকবাজারে সয়াবিন তেলের প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য এক হাজার ১০০ ডলারে লেনদেন হচ্ছে। যদিও গত এক বছর আগে বুকিং দর ছিল ৯১১ ডলার। তবে কয়েক মাস আগেও আরও বেশি ছিল। চীন, ভারতসহ বড় ভোক্তা দেশগুলোর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশগুলোয় মজুত কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক বড় একটি ভোজ্যতেল আমদানিকারক গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, বন্দর দিয়ে এখন যেসব তেল আমদানি হচ্ছে, তার ঋণপত্র বিশ্ববাজারে চড়া দাম থাকার সময় খোলা হয়েছে; যা এখন বাজারের সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কিছুটা কমেছে। সেই সব তেল দেশে আসতে দেড় মাস সময় লাগবে। কোনো কোনো এলাকায় কিছুটা সংকট থাকলেও বাজারে তেল সরবরাহ ঠিক আছে। আশা করছি, আরও সরবরাহ বাড়বে। উল্লেখ্য, দেশের ভোজ্যতেলের বাজারের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে আমদানি হয় ৩০ থেকে ৩৩ লাখ টন। মধ্যে পাম অয়েল ১৮ টন এবং সয়াবিন ১২ লাখ টন। এসব চাহিদার সিংহভাগ তেল সরবরাহ করে তেলের বাজারের সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবয়েল, আবুল খায়ের গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপ।