Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 5:35 pm

‘সশস্ত্র বাহিনীর লজ্জা দিবসে’ মিয়ানমারে নিহত আরও ৯০

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সামরিক বাহিনী দেশের জনগণ ও গণতন্ত্র রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ঘোষণা দেয়ার পরদিন গতকাল শনিবার দেশটিতে আরও অন্তত ৯০ বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপনের মধ্যেই দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। খবর: বিবিসি, রয়টার্স।

শনিবার ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে ‘মাথায় ও পিঠে গুলিবিদ্ধ’ হওয়ার হুমকি উপেক্ষা করে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসার পর নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়। ইয়াঙ্গুুনের দালা শহরতলির একটি থানার বাইরে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত চারজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার স্থানীয় গণমাধ্যম নাও।

বাণিজ্যিক এ রাজধানীর উত্তর দিকের জেলা ইনসেইনে একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়া তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে স্থানীয় একটি অনুর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের এক খেলোয়াড়ও আছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিওতে তিনজন এবং ইয়াঙ্গুনের কাছে বাগো অঞ্চলে চারজন নিহত হয়েছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হোপিন শহরেও এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।

মান্দালয়ে বিভিন্ন ঘটনায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মিয়ানমার নাও। সব মিলিয়ে শনিবার মিয়ানমারজুড়ে অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে মিয়ানমার নাও।

গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ করে আসছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণ। এতে এ পর্যন্ত অন্তত ৩৬৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গ্রুপ সিআরপিএইচের মুখপাত্র ডা. সাসা বলেন, ?‘সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজ লজ্জা দিবস।’ কয়েক সপ্তাহ আগে দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তিন শতাধিক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার পর আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদ্যাপন করছে।

রাজধানী নেইপিদোতে শনিবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি জানাননি তিনি।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেন, ‘দেশের জনগণের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় সামরিক বাহিনী। অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।’

গত ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এছাড়া তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) পার্লামেন্ট সদস্যসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে মিয়ানমারে জাপানের আধিপত্য প্রতিরোধে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি, যা আঞ্চলিকভাবে পরিচিত ‘তাতামাদো’ নামে। এর দু’বছর পর ১৯৪৭ সালে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতেই গুপ্তহত্যার শিকার হন তিনি।

প্রকৃত বন্ধু রাশিয়া: মিয়ানমারের রাজনীতিক অং সান সু চিকে আটকের পর রাজধানী নেইপিদোর অজ্ঞাত স্থানে তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সামরিক বাহিনী। অভ্যুত্থানের কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কিছু দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করছে রাশিয়া।

শুক্রবার মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নেইপিদোতে বৈঠক করেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার ফোমিন। শনিবার দেশটির সশস্ত্র বাহিনী দিবসে নেইপিদোতে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, রাশিয়া সত্যিকারের বন্ধু। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর এ দিবসে সাধারণত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দেখা গেলেও এবারে তা দেখা যায়নি।