গাজী তারেক আজিজ: একটা বিষয় নিয়ে খুব আলোচনা শুরু হয়েছে। আর তা হচ্ছে অক্সিলারি (সহযোগী) পুলিশ ফোর্স। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনবলে অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা আমার আছে। আমি সেই মোতাবেক অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স হিসেবে যারা প্রাইভেট নিরাপত্তার লোকেরা আছে তাদের নিয়োগ দিচ্ছি।’ সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয়, পুলিশকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে ডিএমপিতে এই লোকবল নিয়োগ দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, এর সংখ্যা ৫০০ হতে পারে।
এই মর্মে বিবিসি নিউজ বাংলা তাদের নিজস্ব নিউজ সাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার সূত্র ধরেই এই আলোচনার শুরু। প্রতিবেদনটিতে আরও প্রকাশ করা হয়, রাজধানীর বিভিন্ন শপিং মলসহ আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে বেসরকারি কর্মীদের ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে জানানো হয়নি—কোন কোন বেসরকারি সংস্থা থেকে এই বৃহৎ লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে? তাদের কী কী সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে? তাদের কাজের পরিধি কতটা বিস্তৃত থাকবে? তাদের জবাবদিহি কীভাবে নিশ্চিত করা হবে? তাদের পদমর্যাদা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? তাদের বয়স কত হবে? তাদের কর্মঘণ্টা কত হবে? যাদের নিয়োগ দেয়া হবে, তারা কি শুধুই সংশ্লিষ্ট বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে?
যেমন পুলিশ সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতিরেকে কাউকে তল্লাশি করতে পারে না। যদিও পুলিশকে কোনো আসামিকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছু আইনি নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। তাদের কাজে সহায়তার নামে ‘সোর্স’-এর সহায়তা নিয়ে থাকে। যদিও সেই সোর্সের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাধারণের ভোগান্তির কথা কমবেশি সবারই জানা। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যাত্রীবাহী বাসে পুলিশ গাড়ি থামানোর সংকেত দিলে কতিপয় লোক কখনও পুলিশ, কখনও পুলিশের লোক আবার কখনও সোর্স বলে পরিচয় দিয়ে যাত্রীদের হেনস্তা করে থাকে, যা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা যায়। তাহলে যদি পুলিশের কাজে গতিশীলতা আনতে অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেয়া হয়, যাদের থাকবে আটক কিংবা গ্রেপ্তারের ক্ষমতা, সেই ক্ষমতা পেলে অপব্যবহার হওয়ার কথা বলছেন বিশিষ্টজনেরা। এই অক্সিলারি ফোর্স সুনির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য দায়িত্বশীল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এও জানানো হয়েছে, তাদের ‘সনদপত্র’ দেয়া হবে। যদিও বলা হয়নি, সেই সনদপত্র এই ফোর্সের সদস্যরা ঠিক কোথায় ব্যবহার করতে পারবেন।
আমরা অতীতে দেখেছি বিভিন্ন সুপারশপ কিংবা বিপণিবিতানগুলোয় ‘গ্রুপ ফোর সিকিউরিটি’ বা ‘এলিট ফোর্স’ বা নামি-বেনামি অনেক সিকিউরিটি কোম্পানি এসব লোকবল নিয়োগ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। যদিও কতটুকু করতে পেরেছে, তা প্রশ্নাতীত নয়। আর বেনামি সিকিউরিটি কোম্পানি এমন ধরনের লোক নিয়োগ দিয়েছে, যা অনেকখানি দায়সারা। এর অর্থ হচ্ছে, তাদের প্রাণ যায়-যায় অবস্থা! তা হলে সেসব লোক কি অন্যের নিরাপত্তা বিধান করবে? তারা নিজেই চলতে-ফিরতে পারে না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, ব্যাংকের বুথে দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা প্রহরীও অপরাধী চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লুটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার খবর পাওয়া যায় অহরহ। সম্প্রতি বনানীতে একটি বাসায় নিয়োজিত নৈশপ্রহরীর ডাকাতদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খবরে মানুষের উদ্বেগ বেড়েছে। অথচ একজন দারোয়ানের কাছে এমনটা কেউ আশা করেনি!
ডিএমপির এই অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যরা তদন্তকাজে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু একবার যদি পুলিশ তথা এই বাহিনীর নাম নিজের সঙ্গে জড়াতে পারে, তা হলে তাদের কার্যকলাপ কী হতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন।
ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের ডিসি তালেবুর রহমান নিউজ সংস্থাটি বিবিসি বাংলাকে আরও বলেন, অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। নিয়োগ পাওয়ার পর তারা পুলিশের সঙ্গে থেকেই কাজ করবে।
একা দায়িত্ব পালন করার সময় তারা পুলিশের মতো আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারবে বলেও জানান তিনি। কিন্তু সেই গ্রেপ্তারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি কতটুকু থাকছে, এ বিষয়ে সাধারণ নাগরিকরাও নির্বিকার থাকছেন না। তাহলে শুধু নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রেই শেষ না হয়ে মানুষের জানমালের হেফাজতে নতুন এই বাহিনী কতটুকু সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে, তা এখনই বলে দেয়া যাচ্ছে না।
আর এক্ষেত্রে ক্ষমতা বা আইনের অপব্যবহার রোধে এই ফোর্স নিয়োগে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। তার মানে দাঁড়ায় একেবারে লাগামহীন যাতে না হয় বাহিনীটি, সে বিষয়েও কঠিন নজরদারি করতে হবে। তবে সাধারণ মানুষ এতে কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন বলে পরিলক্ষিত হতেও দেখা গেছে। যদিও সবচেয়ে মোক্ষম কথাটি বলেছেন পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা। বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা নিরপেক্ষ লোক নেবে বলে আশা করছি। তারা যেন কোনো পলিটিকাল বায়াসড লোক না নেয়। আর যদি নিয়োগকৃত লোকজন রাজনৈতিকভাবে বায়াসড হন, সেক্ষেত্রে শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। আর নিয়োগ দেয়া হলেও তারা আইনি দায়িত্ব পালনেও যথাযথ নাও হতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশ আনসার বাহিনীকে পুলিশের ক্ষমতা প্রদান করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এমন সহযোগী নিয়োগ দেয়ার নজির নেই বলেও জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তারা। এ থেকেও একটি বিষয় পরিষ্কার যদি পুলিশ লোক প্রয়োজন পড়েও তাহলে আনসার কিংবা ক্যাডেট কোর থেকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে, যা সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য হতে পারে, যতদিন পর্যন্ত পুলিশ পুরো উদ্যমী হয়ে কাজে না ফিরতে পারে। এতকিছুর পরও জনমনে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশ কি আদৌ জনবান্ধব হবে, নাকি আগের মতোই দমন-পীড়নেই ব্যবহূত হতে থাকবে? কথায় আছে, ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা!’ আমরা এর ব্যতিক্রম দেখে অভ্যস্ত হতে চাই।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার তালেবুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ মোতাবেক ডিএমপি কমিশনার যদি মনে করেন, যেকোনো ব্যক্তিকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। মেট্রোপলিটন পুলিশে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী এই সহযোগী পুলিশ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তাহলে একটি বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায়, আইন মেনেই এই নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কেনই বা হঠাৎ করে এই ফোর্সের প্রয়োজন পড়ল? শুধুই কি নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয় নাকি ভিন্ন কিছু? এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠতেও শুরু করেছে এই বাহিনীকে ঘিরে। বলা হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকতে পারে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরগরম।
অক্সিলারি ফোর্স নিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝায়—পুরো ফোর্স নয়, তবে আধা সরকারি ফোর্স। পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এ ধরনের ফোর্স ব্যবহার করার বিষয়টি পুলিশ আইনেই আছে।
এ-সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে এমন বাহিনী ব্যবহারের নজির আছে উল্লেখ করে বলেন, অল্প সময়ের জন্য এ ধরনের সহযোগী ফোর্স ব্যবহার করার নজির আছে। এটা খরচও যেমন বাঁচায়, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকরও। কিন্তু একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট আর যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাপট এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে পুলিশের সাবেক আইজিপি আরেকটু এগিয়ে বলেন, আমাদের বিদ্যমান আইনে স্পেশাল পুলিশ ব্যবহার করা যায়। পুলিশ নিজের কাজের সুবিধার জন্য এটি ব্যবহার করে থাকে।
যদি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আনা হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে আর বিকল্প আর কিইবা হতে পারে? প্রতিনিয়ত হত্যা, গুম, ধর্ষণ, চুরি ছিনতাই, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মব ভায়োলেন্স নামক আতঙ্ক থেকে মানুষ কীভাবে রেহাই পেতে পারে?
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার জানান, ‘এই ফোর্সের হাতে একটি ব্যান্ড থাকবে, যাতে লেখা থাকবে সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা। আইন অনুযায়ী, তারা দায়িত্ব পালন ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন।’ যদিও আলোচনার শুরুতেই জিজ্ঞাস্য ছিল, এ ধরনের সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তার বেতন-ভাতার সংস্থান ঠিকভাবে হবে কি না? তারা সরকারি কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা হবেন? এ বিষয়ে পরিষ্কার করা হয়নি, তাদের কি পরে আবার নিয়োগ কিংবা নিয়মিত করা হবে কি না? আবার যদি নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেদের সংশ্লিষ্ট বাহিনীতে একীভূত করার দাবি তোলেন, সেক্ষেত্রে কী হবে?
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, পুলিশ অফিসার যেভাবে আইনগতভাবে প্রটেকশন পান, এই অক্সিলারি ফোর্সের সদস্যরাও সেই প্রটেকশন পাবেন।”
দায়িত্ব পালন শেষে এই বাহিনীকে একটি সার্টিফিকেটও প্রদান করা হবে বলেও বিবিসি বাংলাকে জানান ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান। আগেই বলেছি এই সার্টিফিকেট দিয়ে তাদের কী অর্জন হবে? এর বিপরীতে কি অবসরকালীন ভাতা দাবি করতে পারবে? যদি না পারার কথা থেকেও থাকে করলে সমাধান কীভাবে?
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডে-ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার প্রচলন রয়েছে। আবার মাস্টার রোল কর্মচারীও যেমন রয়েছে, তেমনি করে উন্নয়ন খাত ও রাজস্ব খাতের কর্মচারীও রয়েছে। এই ফোর্সের সদস্যরা কি রাজস্ব খাতের নাকি উন্নয়ন খাতের বলে বিবেচিত হবে?
তবে ডিসি তালেবুর রহমান জানান, এই অক্সিলারি বাহিনী পুলিশের মতো বেশ কিছু কাজ করতে পারলেও তারা কোনো ধরনের ইনভেস্টিগেশন বা তদন্ত পরিচালনা করতে পারবে না।
এ নিয়ে ডিএমপির মিডিয়া শাখার ডিসি তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, পুলিশ যেমন দায়িত্ব পালন করে, ঠিক একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আটক বা নিয়মিত টহলের মতো দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে।
মাঠে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ আর এই বাহিনীটির কাজে কী কী পার্থক্য রয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, পুলিশ বাহিনীর মতো প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, কিংবা দায়বদ্ধতার জায়গাগুলো থাকবে না এই ‘সহযোগী ফোর্সের’ কাছে।
এমনকি তাদের কোনো ধরনের অস্ত্র সহযোগিতা দেয়া হবে কি না, সেটি নিয়েও আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছি, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে, তারা পুলিশের সহযোগী ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। পুলিশের অথরিটি তাদের আছে, সেটা বোঝানোর জন্যই তাদের আর্মড ব্যান্ড দেয়া হবে। কিন্তু তাদের পেশাদার পোশাক কী হবে? কোনো বাহিনীর আদলে ডিজাইন করে সরবরাহ করা হবে কি না, তা জানা যায়নি।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ঠিকমতো লোক যদি না নেয়া হয়, ভেরিফাইড লোক না নেয়া হয়, তাহলে এর অপব্যবহার হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভেরিফাইড লোক নেয়া জরুরি।
তাহলে এই সহযোগী বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কোনো অন্যায় করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে—এমন প্রশ্নে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মি. হুদা বলেন, বড় অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। আর ছোটখাটো অন্যায় করলে তাকে যে কোনো মুহূর্তে চাকুরিচ্যুত করা যাবে, তাতে খুব বেশি আইনকানুন মানতে হবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে আপনাদের জানাতে চাই, অনুরোধ করতে চাই—আপনারা যখন বাড়ি যাবেন, তখন আপনার বাড়ি, ফ্ল্যাট দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিজ দায়িত্বে করে যাবেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন করার সুযোগ থাকছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে বিশেষ তার বাসাবাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়, তাহলে তিনি যে বললেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি’—এ কথা কী অর্থ বহন করে?
যদিও লোকবল-স্বল্পতার অজুহাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে অনেক রাত পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর মার্কেট ও শপিং মলগুলো খোলা থাকে। তবে এ দায়িত্ব পালনে পুলিশের স্বল্পতা রয়েছে।
যে কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেসরকারি এই নিরাপত্তা কর্মীরা মূলত ‘অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স’ হিসেবে কাজ করবে, তা হলো এই যে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী বলা হচ্ছে, তারা তো বেশিরভাগই বিভিন্ন বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক বা সিপাহি। এক্ষেত্রে কি তাদের পুলিশ বাহিনীতে পরে একীভূত করার সুযোগ থাকছে? যেমন, একদিকে পূর্বতন প্রতিষ্ঠান থেকে পেনশন ভোগ করছেন। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। আবার যদি পুলিশ বাহিনীর স্থায়ী সুবিধাপ্রাপ্ত হন তা হলে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হতে পারে। তাই যা কিছু করা হোক না কেন জেনে-বুঝে করাই সমীচীন। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া লোকগুলো কোনো সুনির্দিষ্ট দল কিংবা মতাদর্শের কি না, তাও যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দিতে পারলে প্রশ্ন কম উত্থাপিত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, সব আইনই প্রণয়ন করা হয়ে থাকে মানুষের কল্যাণে। কিন্তু তা শেষমেষ হয়তো আর হয় না, ঘটতে থাকে অপপ্রয়োগ, হয়ে ওঠে অত্যাচারী শাসকের হাতিয়ার স্বরূপ। তথাপি নতুন কতিপয় মানুষ খুব একটা ধাতস্থ না হওয়া পর্যন্ত সব আইন সহজে গ্রহণ করতে চায় না। দিনশেষে মানুষ চায় জানমালের নিরাপত্তা। প্রতিনিয়ত আমরা উদ্বিগ্ন থাকতে থাকতে এখন আল্লাহর ওপর ভরসা করে দায়িত্বশীলদের চাপমুক্ত করতে শিখেছি। তারপরও কতটুকু পেরেছি? আদতে পেরেছি কি না, সে বিতর্ক করার সময় এখনই নয়। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে এটুকু প্রত্যাশা করি, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। এর বেশি আর কীইবা থাকতে পারে? বাঁচলে ভোট ও ভাতের অধিকার! মৌলিক অধিকার তথা মানবাধিকার।
আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী