সহায়তা স্থগিত করল বিশ্বব্যাংক আফগান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: তালেবানের আফগান দখলের ১০ দিনেও কার্যত দেশের সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বরং আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ফলে দেশটির অর্থনীতির ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি দেশ সীমান্ত বন্ধ রাখায় সব ধরনের বাণিজ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন আফগান ক্ষুদ্র,

মাঝারি ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ভবিষ্যতে দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, ব্যবসা বাণিজ্যের কী হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। খবর: আল জাজিরা।

এদিকে, শুরুতেই আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আফগানদের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থ স্থগিত করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল। সর্বশেষ আফগানিস্তানে সহায়তা স্থগিত করল বিশ্বব্যাংক। আর জাতিসংঘ বলছে, মানবিক সংকটে আফগানিস্তান। ফলে দেশটির ভাগ্যে কী রয়েছেÑতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী মহল।

গত কয়েকদিনে রাজধানী কাবুলের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। তালেবান ক্ষমতা নেয়ার পর হাজার হাজার মানুষ দেশত্যাগ করতে ইচ্ছুক। অনেকেই এখনও বিমানবন্দরে ভিড় করছেন দেশ ছাড়ার আশায়। ফলে বাজারে লোকজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ভয় আর আতঙ্কে অনেকে এড়িয়ে চলেন বাজারঘাট। ক্রেতাশূন্য প্রায় বেশিরভাগ দোকানপাট।

তালেবানের দখলের পর অর্থনীতিতে একের পর এক খারাপ খবর আসছে দেশটির। বিশেষ করে অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র বন্ধ করেছে

দেশটির রিজার্ভ অর্থ। ফলে নতুন সরকার গঠন হলেও অর্থ সহায়তা কতটুকু আসবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ওপর।

দেশটির অধিকাংশ ব্যাংক বন্ধ, এটিএম বুথে টাকা নেই, খালি পড়ে আছে, বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ, পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসও বন্ধ। বন্ধ রয়েছে বিয়ে বা অন্য কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানও। ফলে সব ধরনের বেচাবিক্রি প্রায় বন্ধ। কার্যত অচল হয়ে পড়েছে কাবুলের অর্থনীতি।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, যারা শুধু ছোট্ট দোকান করে সংসার চালান তারা এখন পথে বসেছেন। ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে তাও অনিশ্চিত।

ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ জানান, রাতারাতিই কাবুল তালেবানের দখলে যাওয়ায় তিনি গভীর সংকটে পড়েছেন। তিনি বলেন কাবুলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুরোটাই এত দ্রুত বদলে গেছে যে বলার আর কিছু নেই।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দেশের জনগণকে ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় অবস্থা আরও বেশি শোচনীয় হয়ে পড়ে।

এদিকে, তালেবান কাবুল দখলের পর সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা যদিও বারবার আশ্বস্ত করছেন, তারা শুরুতেই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো বিনির্মাণে কাজ করবেন। একই সঙ্গে নারী ও শিশু অধিকার সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা।

আফগানিস্তানে সহায়তা স্থগিত বিশ্বব্যাংকের: এদিকে তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর এখন সেটি দেশটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কতটা প্রভাব ফেলে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্বব্যাংকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশটির উন্নয়ন ও বিশেষত নারীদের ওপর পরিস্থিতি পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েই উদ্বেগ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের ওই মুখপাত্র আরও জানান, তারা আফগানিস্তানে কষ্টার্জিত উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখার উপায় সন্ধান করছে।

বর্তমানে আফগানিস্তানে বিশ্বব্যাংকের দুই ডজনের মতো উন্নয়নমূলক প্রকল্প রয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা আফগানিস্তানে পাঁচ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে।