Print Date & Time : 11 September 2025 Thursday 9:43 am

সহিংসতার মধ্যে শেষ বরিশালের উপনির্বাচন, তিন সংবাদকর্মী আহত

প্রতিনিধি, বরিশাল: উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে বরিশাল নগরীর ২৮নং ওয়ার্ড উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে নির্বাচনী সহিংসতায় তিন সাংবাদিকসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে কাশিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে চারজনকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বসিক) ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হয়। ইভিএমের মাধ্যমে তিনটি কেন্দ্রে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে মোট তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে জাহিদ হোসেন, ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে হুমায়ন কবির ও লাটিম প্রতীক নিয়ে সৈয়দ গোলাম কবির মামুন।

স্থানীয়রা জানান, ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় লাটিম প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ গোলাম কবির মামুনের পরাজিত হওয়ার গুঞ্জন ওঠে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তার কর্মী-সমর্থকরা। একপর্যায়ে তারা জাহিদ হোসেনের ঘুড়ি প্রতীকের এক সমর্থককে বেদম মারধর করেন। তারা সেনটারিং ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন নুরুল হক ও মামুনের ওই সমর্থককে।

এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেস চন্দ্র হালদার জানান, তিনি ঘটনাস্থলে আছেন। মারধরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে সারাদিন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও ফল ঘোষণার পর ব্যাপক উত্তেজনা হয় ওই ওয়ার্ডে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাশীপুরের  অন্ধ মাদরাসা ও প্রশিক্ষণ অফিসের সামনে নির্বাচনে জয়লাভ করা জাহিদ হোসেন রুবেলের নির্বাচনী এজেন্ট ও তার বন্ধু জহির উদ্দিন বাবর, মাহমুদ হোসাইন মামুন ও নুরুল হক মিয়াজী হেঁটে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের ওপর নির্বাচনে হেরে যাওয়া গোলাম কবির মামুনের ছেলে রাব্বি, ফারুক মিরার ছেলে রামিম, রাফি, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের জহির মুন্সির ছেলে মাদক ব্যবসায়ী নয়ন মুন্সি, মাঝিবাড়ির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাগর, কাশিপুর বাজারসংলগ্ন কামালের ছেলে সুমন, হরিপাশা ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী বাড়ির স্বাধীন, পেশাকারের ছেলে সামিতসহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনের একটি বাহিনী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।

এসময় তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ ও ছবি তোলার সময় গোলাম কবির মামুনের সমর্থকরা চড়াও হয় দৈনিক ভোরের অঙ্গীকারের শিক্ষানবিশ রিপোর্টার শাকিল, ঢাকা প্রতিদিনের বরিশাল প্রতিনিধি সবুজ ও কলমের কণ্ঠের রিপোর্টার রিপন রানার ওপর।

এ সময় সংবাদকর্মী শাকিল সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাকিলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে তার দুটি মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।

একই সময় ঢাকা প্রতিদিনের প্রতিনিধি সবুজ সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাকেও মারধর করে তার তিনটি মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়। সহকর্মীর ওপর হামলা দেখে কলমের কণ্ঠের রিপোর্টার ছুটে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। তারা বর্তমানে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাংবাদিক শাকিলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

হামলার বিষয়ে বিজয়ী কাউন্সিলর রুবেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দ্রুত হামলাকারী রাব্বিসহ বাকিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি প্রশাসনের কাছে।

হামলার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত রাব্বির বাবা মামুন মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ওই হামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমার ছেলে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর বাসায় চলে আসে। আহত সংবাদকর্মীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা হামলার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এয়ারপোর্ট থানার ওসি কমলেস চন্দ্র হালদার জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মারধরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দোষীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি।

তবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সংবাদকর্মী শাকিলের বড় ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

হামলার বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা নির্বাচনী সহিংসতায় বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা চলছে।