নুরুন্নাহার চৌধুরী কলি : দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস গতকালও দুই স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৮ পয়েন্টে নেমেছে; যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। অন্য সূচকগুলোরও একই চিত্র দেখা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পাশাপাশি কিছুদিন ধরেই বাজারে অস্থিতিশীল ধারা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তান-ভারত সহিংসতা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক বাড়িয়েছে। সবমিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কের কারণে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধস দেখা গেছে। তাই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইর তথ্যমতে, গতকালের লেনদেনের চিত্র আগের দিনের চেয়ে কিছুটা আরও উদ্বেগজনক ছিল। গতকাল বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। ডিএসইতে গতকাল মোট ৩৯৯টি কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৩৮৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটি ফান্ড ও কোম্পানির দর।
এদিকে বিভিন্ন ক্যাটেগরির মধ্যে ‘এ’ ক্যাটেগরির ২১৯টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ২১৫টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে অপরিবর্তিত ছিল ৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট দর।
একইভাবে ‘বি’ ক্যাটেগরির ৮৩টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর দাম বেড়েছে। এর বিপরীতে ৭৯টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে। যেখানে ৯৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ৯১টি ফান্ড ও কোম্পানির দর-ই কমেছে।
মিউচুয়াল ফান্ড খাতেও পতন দেখা গেছে। লেনদেন হওয়া ৩৬টি ফান্ডের সবগুলোরই ইউনিট দর কমেছে। করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে লেনদেন হওয়া ৪টির মধ্যে ২টি বন্ডের দর কমেছে, ২টির দর অপরিবর্তিত ছিল। আর লেনদেন হওয়া ২টি সরকারি সিকিউরিটিজের দরই কমেছে।
ডিএসইতে গতকাল মোট ২৪ কোটি ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ২৬টি শেয়ার ও ইউনিট এক লাখ ৬৭ হাজার ২৭৭ বার হাতবদল হয়েছে। এর জের ধরে দিনশেষে ডিএসইতে মোট লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৫১৬ কোটি ৪৬ লাখ ৯২ হাজার ৩১১ টাকা।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৩১ পয়েন্ট কমে ৮ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইতে গতকাল মোট ২১৭টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর বেড়েছে। এর বিপরীতে ১৮৭টি ফান্ড ও কোম্পানির দর কমেছে। দিনশেষে ১০টি ফান্ড ও কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল।
গতকাল সিএসইতে মোট ৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এর আগের কার্যদিবসে সিএসইতে ১১ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছিল।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহিংস পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকারীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। কোনো আতঙ্কে বা গুজবে কান না দিয়ে শেয়ার বিক্রি না করে প্রয়োজনে বাজার পর্যবেক্ষণের পরামর্শও দিয়েছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাময়িক কোনো ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং পুঁজিবাজার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা জরুরি। তাহলে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা কমবে; যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।