নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ কেড়ে নিল প্রবীণ সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রাণ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন কয়েকবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
কভিড আক্রান্ত হওয়ার পর ৯ দিন আগে রিয়াজ উদ্দিনকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই গতকাল দুপুরে তার মৃত্যু হয় বলে সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষায় রিয়াজ উদ্দিনের অবদান স্মরণ করেন সহকর্মী সাংবাদিকরা। তার মৃত্যুর খবর আসার পর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেক সাংবাদিক ও কর্মচারী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজ বেলা ১১টায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অর্ধ শতকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি ডেইলি স্টারের উপ-সম্পাদক, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক ও নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ড পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের জš§ ১৯৪৫ সালের ৩০ নভেম্বর নরসিংদীর মনোহরদীর নারান্দী গ্রামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতকোত্তর ও ১৯৭২ সালে এলএলবি পাস করেন তিনি।
সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার আগে কয়েকদিন তিনি ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও টাঙ্গাইলে কাপাসিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেন।
১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য হিসেবে ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত হন রিয়াজ উদ্দিন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন তিনি।
একাত্তরের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের সময় রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান অবজারভারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ অবজারভারে যোগ দেন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে প্রধান প্রতিবেদক ও বিশেষ প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাংবাদিকদের ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (সাফমা) সভাপতি ছিলেন।
তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। এরপর ২০০২ সাল থেকে আবার দুই দফা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন।
ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন। প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে বাংলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তথ্য উপদেষ্টাও ছিলেন কয়েকদিন।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ শেরেবাংলা পদক. মাওলানা আকরাম খাঁ স্বর্ণপদক, নরসিংদী প্রেস ক্লাব পদক, মাদকবিরোধী ফেডারেশন স্বর্ণ পদকসহ নানা পদক ও সম্মাননা অর্জন করেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব শোক প্রকাশ করেছেন।
শোকবার্তায় ফরিদা ও ইলিয়াস বলেন, ‘প্রখ্যাত সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে সাংবাদিকতা পেশার অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অভিভাবক।’