Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 4:58 am

সাড়ে ৫ টন পণ্য আসার কথা কনটেইনার এসেছে খালি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কনটেইনার ভর্তি সিগারেট আমদানি হয়েছে এমন গোপন তথ্যে কনটেইনার লক করে দেয়া হয়। বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও কনটেইনার খুলে দেখাতে গড়িমসি করে আমদানিকারক। পরে ভুয়া একটি বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। যাতে কফিমেট, চকোলেট, কোকোয়া পাউডার, মিনারেল ওয়াটার ও বিনস আমদানির ঘোষণা ছিল। কনটেইনারটি ফোর্স কিপ ডাউন দিয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অবাক হন। কারণ অ্যাসাইকুডার লক নম্বর আর কনটেইনারের লক নম্বর একই নয়।  অর্থাৎ আবারও আমদানিকারকের চাতুর্য। শেষে দ্বিতীয়বার ফোর্স কিপ ডাউনে কনটেইনার খুলে দেখা গেল, কনটেইনারের ভেতর সিগারেট তো নেই। এমনকি আমদানিকারকের ঘোষিত সেই ৫ দশমিক ৬ টন পণ্যও নেই। কনটেইনারের ভেতর পাওয়া গেছে কাঠ, প্লাস্টিক ও সোলারের কয়েকটি ক্যারেট। রাজধানীর অদূরে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এমন একটি খালি কনটেইনার পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের ধারণা, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চক্রের যোগসাজশে সিগারেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়া পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচার করেছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান।

কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর অদূরে পানগাঁও কাস্টম হাউসে এমএক্সসিইউ-০০৩১৯৩২২জি১ নাম্বারের ২০ ফুট উচ্চতার একটি কনটেইনার আসে। ওই কনটেইনারে পণ্যের আড়ালে বিপুল পরিমাণ সিগারেট আমদানি করা হয়েছেÑএমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ওই বছরের ৩ অক্টোবর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে তা লক করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জম জম করপোরেশনকে বিল অব এন্ট্রি দাখিল ও কনটেইনার খুলে পণ্য দেখাতে বলা হলে তারা গড়িমসি করে। পরে আমদানিকারকের প্রতিনিধি এমএস প্রোসিয়া নামের সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে আরেকটি বিল অব এন্ট্রি কাস্টমস গোয়েন্দায় দাখিল করেন (বিল অব এন্ট্রি নং-সি ২১৮৯)। ওই বিল অব এন্ট্রিতে আমদানিকারকের ঘোষণা ছিল, সিঙ্গাপুর থেকে ওই কনটেইনারে ৫ দশমিক ৬ টন ওজনের কফিমেট, চকোলেট, কোকোয়া পাউডার, মিনারেল ওয়াটার ও বিনস আমদানি করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, গত ১৩ ফেব্রæয়ারি আমদানিকারককে ফোর্স কিপ ডাউন দেয়া হলে তারা কনটেইনার খুলতে রাজি হয়। ওই দিন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কনটেইনারের কাছে গিয়ে দেখতে পান যে, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে দেয়া লক আর কনটেইনারের লক নম্বরে গরমিল রয়েছে। লক নম্বরে গরমিল থাকায় ওই দিন কনটেইনার আর খোলা হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই কনটেইনার আবারও ফোর্স কিপ ডাউন দেয়া হয়। পরে কাস্টমস কর্মকর্তা, আমদানিকারকের প্রতিনিধি, বন্দর প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে কনটেইনার খোলা হয়। তবে কনটেইনার খুলে ভেতরে আমদানিকারকের ঘোষিত পণ্য বা সিগারেট কিছুই পাওয়া যায়নি। কনটেইনারের ভেতরে কয়েকটি খালি কাঠ, প্লাস্টিক ও সোলারের ক্যারেট পাওয়া গেছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাখিল করা বিল অব এন্ট্রি অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের ইনভয়েস ভ্যালু দেখানো হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ডলার। যাতে শুল্ককরসহ মোট মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা। কনটেইনার বন্দরে আসার পরপরই কাস্টমস গোয়েন্দার তৎপরতা দেখে একটি চক্র সিগারেট সরিয়ে ফেলেছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। কারণ আমদানিকারককে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও তারা বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেনি। এছাড়া পণ্য অ্যাসাইকুডায় দেয়া লক নম্বর আর কনটেইনারের লক নম্বর একই পাওয়া যায়নি। এতে ধারণা করা হচ্ছে, লক কেটে পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে কনটেইনারে অন্য একটি লক লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আমদানির আড়ালে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অর্থপাচার করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।