সাত খুনের মামলার রায়: নূর হোসেন তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় র‌্যাব-১১-এর সাবেক সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এমএম রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া রায়ে আরও আট আসামিকে ১০ বছরের ও এক আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন গতকাল সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক সিও লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এমএম রানা, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, মিজানুর রহমান দীপু, মোখলেসুর রহমান, মহিউদ্দিন মুন্সি, ল্যান্সনায়েক হিরা মিয়া, সিপাহি আবু তৈয়ব, সেলিম, সানাউল্লাহ, শাহজাহান, জালাল উদ্দিন, আসাদুজ্জামান নূর, পুর্নেন্দু বালা, আরওজি আরিফ হোসেন, আল আমিন, তাজুল ইসলাম, এনামুল, বেলাল হোসেন, শিহাব উদ্দিন, মুর্তজা জামান চার্চিল, আলি মোহাম্মদ, আবুল বাশার, রহম আলী, এমদাদুল হক। তাদের মধ্যে সেলিম, শাহজাহান ও সানাউল্লাহ সানা পলাতক।

দশ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রুহুল আমিন, নুরুজ্জামান, এসআই আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল বাবুল, এএসআই কামাল, কনস্টেবল হাবিব, এএসআই বজলুর রহমান ও আলিম। এছাড়া আসামি নাসিরকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ মামলায় মোট ৩৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জন পলাতক রয়েছে। এর আগে কারাগারে থাকা ২৩ জনকে গতকাল সকালে হাজির করা হয়েছে। এ ২৩ জনের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মামলার রায় ঘোষণার পর একটি মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

সাত খুনের ঘটনায় আরেক মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

চন্দন সরকারের মেঝ মেয়ে ডা. সুস্মিতা সরকারও এ রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাবেক পিপি আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তারা এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে উল্লেখ করেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের আইনজীবী খোকন সাহা বলেন, আমি মনে করি আমার আসামি মামলায় ন্যায়বিচার পাননি। আমরা উচ্চ আদালতে এ ব্যাপারে আপিল করবো।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াৎ হোসেন খান বলেন, সাত খুনের নৃশংস ঘটনার পর বিচারের দাবিতে আমরাসহ সারা দেশের আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আমরা আইনি লড়াই করেছি। সেসব আন্দোলন ও আইনি লড়াইয়ের শেষে আজ এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট। রায় যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয় সে দাবি জানাচ্ছি।

সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা ১৮ জন আসামিকে কোর্ট হাজতে আনা হয়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে লে. কর্নেল (বরখাস্তকৃত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, মেজর (বরখাস্তকৃত) আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্তকৃত) এমএম রানাসহ পাঁচ আসামিকে আদালতে আনা হয়।

রায় ঘোষণার পর বেশ কয়েকজন আসামি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে নূর হোসেন, তার সহযোগী চার্চিল, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা নির্বিকার ছিলেন।

রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালত, আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এ সময় প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।