সাত জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যার কবলে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাত নদীর পানি নয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বন্যার কবলে পড়েছে সাত জেলার নিম্নাঞ্চল। সুরমা নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জ শহরের কয়েকটি এলাকায় পানি উঠে গেছে। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের অধিকাংশ নদীর পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে আরও তিন দিন। শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের নদ-নদীগুলোর ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৮টি পয়েন্টে পানি বাড়ছিল। এর মধ্যে ৯টি স্টেশনে পানি বইছিল বিপৎসীমার উপর দিয়ে।

ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদী নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, বহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার, যমুনা নদী গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

আর মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর মধ্যে সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদী সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার এবং যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জের লরেরগড় পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা নদী বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা পেরিয়ে যেতে পারে।

এছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, সোমেশ্বরী এবং ভুগাই-কংশ নদীর পানি কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিস্তার পানির সমতল এই সময়ে স্থিতিশীল থাকলেও ধরলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে, কোনো কোনো পয়েন্টে বিপৎসীমাও পেরিয়ে যেতে পারে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলা শহরের নদী তীরবর্তী নবীনগর, ষোলঘর, কাজিরপয়েন্ট, উকিলপাড়া, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া, পশ্চিমবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অনেক সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন হচ্ছে। অনেক দোকনপাট এবং ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।

হাসনগর এলাকার রফিকুল ইসলাম কালা মিয়া জানান, তার দুটো পুকুরের সব মাছ পানিতে ভেসে গেছে। তাতে তার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। শহরের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল বলেন, “ড্রেনগুলো পরিষ্কার আছে কিনা তা দেখছি আমরা।”

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ি ঢলে সুরমার পানি বাড়ছে। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে গত শুক্রবার থেকে। এই দুই নদীর অববাহিকার দুই শতাধিক চর প্লাবিত হয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। পাট, ভুট্টা, সবজি ক্ষেত ও বীজতলা, এবং তিল, আউশ ধান ও কাউনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, কাউন, চিনাসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষেত ডুবে গেছে। পানি উঠেছে চর এলাকায় নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট ঘরবাড়িতে। নীলফামারীতে তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। মানুষকে উচুঁ জায়গায় সরে যেতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার কুমিল্লা অঞ্চলসহ, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি ) বৃষ্টিপাত হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় যেসব এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে, তা পাঁচ থেকে সাত দিন স্থায়ী হতে পারে। গঙ্গার পানি বাড়লেও আপাতত কোনো পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে মুন্সীগঞ্জ জেলার ভাগ্যকূল পয়েন্টে এবং রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এসব জেলায়ও স্বল্প মেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।

এ সময়ে ঢাকার আশপাশের নদ-নদীর পনি বাড়লেও বিপদসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান। জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মৌসুমি ভারী বর্ষণের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

২০১৭ সালে জুলাই-অগাস্টে দুই দফা বন্যা হয়। ওই সময় অগাস্টের বন্যায় দেশের ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। গেল বছর জুলাইয়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ২৮ জেলায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।