সাত দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট পাবে শ্রীলঙ্কা: স্পিকার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন, যা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে। গতকাল শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট পাবে শ্রীলঙ্কা। এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। খবর: রয়টার্স।

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্রটি। দেশের এ পরিস্থিতির জন্য জনাসাধারণ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তার পরিবারকে দায়ী করছেন। গণবিক্ষোভের পর বুধবার তিনি পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিলেও মঙ্গলবার গভীর রাতে একটি সামরিক বিমানে চড়ে পালিয়ে মালদ্বীপে চলে যান। গত বৃহস্পতিবার সেখান থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইটে পৌঁছান সিঙ্গাপুরে।

এরপর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনের হাতে না পৌঁছানোয় শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক জটিলতা বাড়তে থাকে। তার পদত্যাগপত্র হাতে পেয়ে স্পিকার নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। এজন্য শুক্রবার পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু এবং ২০ জুলাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটাভুটির তারিখ ঠিক করে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র হাতে না পাওয়ায় শুক্রবার পার্লামেন্ট বসছে না বলে বৃহস্পতিবার জানান স্পিকার। পরে রাতে স্পিকারকে পদত্যাগপত্র পাঠান গোতাবায়া। সিঙ্গাপুরে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের মাধ্যমে সেই পদত্যাগপত্র কলম্বোয় পৌঁছেছে।

গোতাবায়া তার স্ত্রী ও দুই দেহরক্ষীকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান। সিঙ্গাপুর সরকার জানায়, গোতাবায়াকে ব্যক্তিগত সফরের জন্য সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করবেন, না কি সেখান থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান জানান, গোতাবায়া রাজনৈতিক আশ্রয়ের কোনো আবেদন করেননি, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয়ও দেয়া হয়নি। সিঙ্গাপুর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন সাধারণত অনুমোদন করে না বলে জানান নগররাষ্ট্রটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে পদত্যাগপত্র ও সই যাচাই করার পর শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তা গ্রহণ করার কথা জানান স্পিকার মাহিন্দা। তিনি বলেন, এখন আমরা সংবিধান অনুযায়ী নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করব। স্পিকার তার ঘোষণায় বলেন, শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ৩৮.১ (বি) ধারা অনুযায়ী আমি মহামান্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি। ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ জুলাই থেকে এ পদত্যাগপত্র কার্যকর হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট তার দায়-দায়িত্ব থেকে আইনত পদত্যাগ করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেয়ার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম ও দায়িত্বগুলো পালন করবেন। সে সময় প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পরিচালনার ক্ষমতা তার কাছে থাকবে।

এদিকে গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র পাঠানোর খবর পেয়ে উল্লসিত শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা। বৃহস্পতিবার রাতেই রাজধানী কলোম্বোয় নেচে-গেয়ে আনন্দ করেন হাজারো আন্দোলনকারী। তাদের সঙ্গে শামিল হন সব শ্রেণি ও পেশার অনেক মানুষ। বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা যারপরনাই খুশি। এটি জয়ের মুহূর্ত বলেই আমরা মনে করছি। তবে বিদেশ থেকে এক বার্তায় পুরোনো মিত্র প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেন গোতাবায়া, যার বিরোধিতা করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গত ৮ জুলাই প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন দখল করে নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাড়িতে আগুন দিয়েছিল জনতা। সে সময় বিক্রমাসিংহে জানান, তিনি পদত্যাগ করতে প্রস্তুত। কিন্তু এখন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাই বুধবার তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হলে উত্তেজিত জনতা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরও দখল করে নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করেন বিক্রমাসিংহে। তবে গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবি পূরণ হওয়ায় কলম্বোয় এখন শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ নিয়ে জটিলতার অবসান হওয়ায় পর গতকাল রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি জানান, সংবিধান সমুন্নত রাখতে ও দেশে আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনি কাজ করবেন।