শ্রুতিলেখক জটিলতা

সাত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর পরীক্ষা দেয়া হলো না

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২১৯টি কেন্দ্রে এক হাজার ১৬৪টি বিদ্যালয়ের এক লাখ ৪০ হাজার ৯২৭ এসএসসি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে ৪৭ হাজার ৯০৩ জন, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৩৫ হাজার ৫৫৮ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ৫৭ হাজার ৪৬৬ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। তবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও শ্রুতিলেখক জটিলতায় কেন্দ্রে বসে সময় পার করেছে সাত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে চট্টগ্রাম নগরীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা সবাই নগরীর হামজারবাগ এলাকার রহমানীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা নিজেদের মতো করে শ্রুতিলেখক ঠিক করেছেন, যার কারণে শ্রুতিলেখকদের কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এক পরীক্ষার্থীর মা শারমিন আক্তার বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির ওপরের শিক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক থাকতে পারেন না, সেটা আমাদের জানা ছিল না। স্কুল থেকেও আগে কিছু বলা হয়নি, যার কারণে আমরা নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক ঠিক করেছিলাম। কিন্তু গত সোমবার স্কুল থেকে বলা হয়েছে, তারা পারবে না। শ্রুতিলেখক হতে পারবে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।’

শারমিনের দাবি, বিগত বছরগুলোয় বোর্ড থেকে নবম/দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখক হিসেবে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। সে অনুয়ায়ী এ বছর তারা শ্রুতিলেখক ঠিক করেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে বারবার অনুরোধ করার পরও তিনি শ্রুতিলেখকের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেননি। গতকাল আমরা শ্রুতিলেখক নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বোর্ডে অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু বোর্ড থেকে তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি।’

এদিকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েও লিখতে না পারায় পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ বের হয়ে এসেছিলেন। শারমিন জানান, অভিভাবকরা প্রতিকার চেয়ে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, বোর্ডের অনুমতি ছাড়া শ্রুতিলেখক নিয়ে এ সাত শিক্ষার্থী কেন্দ্রে গিয়েছিল, যার কারণে কেন্দ্র সচিব তাদের প্রবেশের অনুমতি দিতে পারেননি।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘আমাদের নীতিমালায় আছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শ্রুতিলেখকদের অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী হতে হবে। শ্রুতিলেখক যারা থাকবেন, তারা যে ১৮ বছরের নিচেÑএ বিষয়ে তাদের অভিভাবকদের এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রত্যয়ন দিতে হয়। সেখানে তাদের ক্লাস বিবরণ থাকবে এবং শ্রুতিলেখক হিসেবে অংশ নিলে তাদের কোনো আপত্তি নেই, সে কথাটা লেখা থাকতে হয়।’

অধ্যাপক পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক হিসেবে যাদের নিয়ে এসেছিল, তারা ইলেভেন-টুয়েলেভ ক্লাসের শিক্ষার্থী। আর সাত শ্রুতিলেখকÑসবার প্রত্যয়ন একই হাতের লেখা, যার কারণে বিষয়টি নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। তারা শ্রুতিলেখক হিসেবে যাদের বোর্ডে এনেছিলেন তাদের অন্য আরেকটি স্কুলের ছাত্র হিসেবে দেখিয়ে প্রত্যয়ন এনেছিলেন। আমরা সে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি জানিয়েছেন, শ্রুতিলেখক হিসেবে যাদের আনা হয়েছে, তারা তার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নয়। মানবিক কারণে স্কুল প্যাডে তাদের প্রত্যয়ন দিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রত্যয়নটি লিখিতভাবে প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন।’

এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় চট্টগ্রাম  শিক্ষাবোর্ডে নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৮০ জন, অনিয়মিত ২২ হাজার ৭৩৪ জন এবং মানোন্নয়ন ১১৩ জন। মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৬১ হাজার ৭৬৫ জন ও ছাত্রী ৭৯ হাজার ১৬২ জন।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পাঁচ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় মোট পরীক্ষার্থী রয়েছে ৯৯ হাজার ২৪৬ জন, কক্সবাজার জেলায় ২১ হাজার ১৯৩ জন, রাঙামাটি জেলায় ৭ হাজার ৯৭৪ জন, খাগড়াছড়ি জেলায় ৮ হাজার ১৭৯ জন এবং বান্দরবান জেলায় রয়েছে ৪ হাজার ৩৩৫ জন।