Print Date & Time : 9 September 2025 Tuesday 9:17 am

সাদ্দাম হোসেনের জমানায় ইরাকের অবস্থা ভালো ছিল

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকে ইরাকের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তাদের মতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের আমলেই ইরাকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো ছিল। দেশটির সম্পদ লুট করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্র ওই হামলা চালিয়েছিল বলে বিশ্বাস করেন ৫১ শতাংশ ইরাকি। খবর : বিবিসি। 

মধ্যপ্রাচ্যে তেলসমৃদ্ধ দেশটিতে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের ২০ বছরপূর্তির সময় পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে এসব তথ্য। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের ১৮টি প্রদেশে ২ হাজার ২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইরাকির সঙ্গে মুখোমুখি দেখা করে এ জরিপ চালায় আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল।

মার্কিন হামলার আগের তুলনায় ইরাকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বলেছেন, অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ মনে করছেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া জনগোষ্ঠী ২০০৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সুন্নি আরব, কুর্দি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আর এ সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ জরিপেও ফুটে উঠেছে।

এতে সুন্নি মুসলিম উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৪ শতাংশ বলেছেন, সাদ্দাম হোসেনের আমলে তাদের জীবন সুন্দর ছিল।

জরিপের এ নিরাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে। উত্তরদাতাদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ইরাকের অবস্থাকে ‘খারাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল ২০০৩ সালে যখন একই প্রশ্ন করেছিল, তখন প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন ইরাকি এ কথা বলেছিলেন।

ইরাকের কাছে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনের সরকার বিশ্বনিরাপত্তার জন্য হুমকি দাবি করে ২০০৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি আক্রমণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পরে সেখানে কোনো বিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তবে মার্কিনিদের আগ্রাসনে কয়েক হাজার ইরাকি প্রাণ হারান এবং সে দেশে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

এ হামলার জন্য মার্কিন সরকার যে অজুহাতই দিক না কেন, বহু ইরাকি যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও সন্দিহান। প্রায় ৫১ শতাংশ ইরাকি বিশ্বাস করেন, তাদের সম্পদ লুট করার জন্যই হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই মনোভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে দক্ষিণ-পূর্বের প্রদেশগুলোতে এবং আনবার প্রদেশে, যেখানে প্রচুর তেল ও গ্যাস রয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৯ শতাংশ মনে করেন, মার্কিন আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে উৎখাত করা। যুদ্ধের অন্যান্য কারণ, যেমনÑমার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষা করা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এগুলো সম্পর্কে উত্তরদাতাদের আগ্রহ ছিল কম।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তাদের দেশে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার প্রশ্ন নিয়ে ইরাকিরা এখনও কিছুটা বিভক্ত। ২০০৭ সালে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। আর এখন মোতায়েন রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০ সৈন্য।

ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী উত্তরদাতারা অবিলম্বে মার্কিন প্রত্যাহারের পক্ষপাতী। কিন্তু কুর্দি অঞ্চলসহ ইরাকের উত্তর অংশের বাসিন্দারা মনে করেন, সেখানে এখনও মার্কিন উপস্থিতির প্রয়োজন রয়েছে।

এ জরিপে ৭৫ শতাংশ শিয়া উত্তরদাতা ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযানকে খারাপ ঘটনা বলে মনে করেন। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তার দিক থেকে মিত্রদেশ হিসেবে তারা রাশিয়াকে সমর্থন করেন।

জরিপে দেখা যায়, ৪৭ শতাংশ ইরাকি দেশে থেকেই উন্নয়নকাজে অংশ নিতে চান। অন্যদিকে, ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন উত্তরদাতা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান।