সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা সমর্থনযোগ্য নয়

বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি চাকরিজীবীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন, অথবা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। কিছু দাবি দীর্ঘদিনের, কিছু দাবি নির্বাচন সামনে রেখে, কিংবা কিছু দাবি পূরণের কর্মসূচি দেখা যায় জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে, অর্থবছর শুরুর দিকে। এবার লক্ষণীয় যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাজীবীরা বেতন বৃদ্ধি, চাকরি স্থায়ীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলেন করেছেন। এখন দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের দাবি পূরণের কোনো সুযোগ নেই। এখন দাবি পূরণের সময়ও নয়। এরই মধ্যে দেখা গেছে, এমন কিছু দাবিতে আন্দোলন হয়েছে, যেটি আদৌ বেতন বৃদ্ধি ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সংগঠিত হয়নি। মূল উদ্দেশ্য সরকারের ওপর ব্যর্থতার দায় চাপানো। এরই মধ্যে তা প্রমাণিত হয়েছে। এর পেছনে কলকাঠি কারা নাড়াচ্ছে, তাও সাধারণ মানুষ জানে।

দাবি আদায়ের জন্য কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর অনুরোধে কর্মসূচি স্থগিত করে সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেছেন তারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানান পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

প্রসঙ্গত, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় সাময়িকভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করে দেয় পবিস। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে ও জিম্মি করে দাবি আদায়ের এমন পদ্ধতি দায়িত্বশীল আচরণ নয়। যখন-তখন কর্মরিতি পালন করতে পারেন না প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। কয়েক দিন আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর প্রত্যাশী তরুণেরা রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করেন। এর এক দিন পর তেজগাঁও এলাকায় ৬ ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন তথা অবরোধের কারণে কোনো সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলে সারা শহরের জনজীবন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। দাবি আদায় নিয়ে সড়ক অবরোধের চেয়ে উচিত যৌক্তিক পথ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা তুলে ধরা। বর্তমানে দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায়। যৌক্তিক যেকোনো দাবি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে, এমন একটি আশাবাদ তৈরি হয়েছে।

দাবি-দাওয়া আদায়ে প্রধান উপদেষ্টা এক ভাষণে বলেছেন, আপনাদের যা চাওয়া, লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসংগতভাবে যা কিছু করার, আমরা অবশ্যই করব। কিন্তু আমাদের ঘেরাও করে কাজে বাধা দেবেন না।’ এর পর আমরা কী দেখছি! দাবি আদায়ে কমপ্লিট শাটডাউর দিয়ে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত করা হচ্ছে ।

যেকোনো জনগোষ্ঠী ও পেশাজীবীদের ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের আন্দোলনকে সমর্থনযোগ্য। কিন্তু সে জন্য সরকারকে যেমন সময় দিতে হবে, তেমনি আন্দোলনের নামে জনগণকে কষ্ট দেওয়া বা জনজীবনকে অচল করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট সবাই জনদুর্ভোগ বিবেচনায় রেখে যৌক্তিক ও নৈতিক আচরণ করবেন বলেই প্রত্যাশা।