দুর্দিনে শ্রমজীবী ও নিন্ম আয়ের মানুষ ঋণ পায় না, সাহায্য পায় না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়ায় কারও কাছে হাতও পাতে না। ফলে বিরূপ সময়ে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হয়। যারা কষ্টে-সৃষ্টে কিছু সঞ্চয় করতে পারে, তারা কোনোভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়। তাই সাধারণ মানুষের বড় ভরসা সঞ্চয়। সঞ্চয়ের জন্য অনেকেরই আর্থিক সংগতি নেই। সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উৎসাহী করে তুলতে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি অধিদফতরে উন্নীত হয়।
জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতরের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাবলম্বী করতে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা; বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরণ করা; সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করা; জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে দেশের বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠী, যেমন নারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, জ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনয়ন; বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা প্রভৃতি।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের রূপকল্প হলো সামগ্রিকভাবে সঞ্চয় ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা। এটির অভিলক্ষ হলো জাতীয় উন্নয়নে অংশীদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র আয়ের জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ এবং জনবান্ধব সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রূপকল্প অর্জিত হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান। এখন বাজেট ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রত্যেক বছরই সে সীমা অতিক্রম করছে। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার ৫১ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। পূর্ববর্তী অর্থবছরে একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশ বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছিল। আমরা মনে করি, সঞ্চয়পত্র থেকে এভাবে সরকারের অনেক বেশি অর্থ নেওয়ার প্রবণতা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এখন গরিবরা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। এর সুযোগ নিচ্ছে ধনীরা। তাই সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থায় সংস্কার আনা জরুরি বলে আমরা মনে করি। গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য আলাদা সেভিংস সার্টিফিকেট চালু করা যেতে পারে। এতে সুদহার তুলনামূলকভাবে একটু বেশি রাখা যেতে পারে। অন্যদিকে সেভিংস বন্ড হবে ধনীদের জন্য। এর সুদহার হবে ব্যাংকের সুদহারের সমান। সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য চালু হওয়া সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত সুবিধাভোগী যাতে তারাই থাকে, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে।
