সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়: কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : কভিড-১৯ সংকটে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া নিয়ে ধনী-গরিবের ব্যবধান হলে গরিব মানুষ এ সময় কোথায় যাবে সেই প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেকে অভিযোগ করেছেন সমাজের উচ্চ শ্রেণি তথা ভিআইপিরা হাসপাতালে সেবা পাচ্ছে, তাদের প্রতি মনোযোগ বেশি। তাহলে আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাবিষয়ক সবাইকে অনুরোধ করব, বাছবিচার নয়, ধনী-গরিব নয়, বিত্তবান-বিত্তহীন নয়, ভিআইপি-নন ভিআইপি নয়; সব রোগী সমান। আপনারা রোগীকে রোগী হিসেবে দেখবেন, কোনো ব্যবধান তৈরি করবেন না।’

শেখ হাসিনার সরকার ‘ধনী-গরিব, বিত্তবান-বিত্তহীন, ভিআইপি-নন ভিআইপি চর্চাকে সমর্থন করে না’ বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।

আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তার থেকে করোনাভাইরাস ‘সংক্রমণের ভয় নেই’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস এমন এক সংক্রমণ, যা কাছের মানুষকেও দূরে ঠেলে দেয়। মুহূর্তেই আপন মানুষ হয়ে যায় অচেনা, সন্তান মা-বাবাকে হাসপাতালে রেখে চলে যাচ্ছে, স্বামী স্ত্রীকে পথের পাশে রেখে চলে যাচ্ছে। আবার মৃত্যুর পর কেউ কাছে আসছে না, দাফন-কাফনের দায়িত্ব নিচ্ছে পুলিশ। পুরোটা জীবন প্রিয়জনের জন্য করে শেষ বিদায় নিচ্ছেন প্রিয়জনদের স্পর্শহীনতায়।’

‘এমন এক দৃশ্য প্রতিনিয়ত আমরা গণমাধ্যমে দেখছি। কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলেছেন, মৃত্যুর তিন ঘণ্টা পর মৃতদেহ থেকে সংক্রমণ ছাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই বলব… নিজেকে সুরক্ষিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে দাফন-কাফন কিংবা সৎকারে অংশ নিতে পারে আপনজনরা। রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হোন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।’

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৬৬টি ল্যাবে এ টেস্ট করানো হচ্ছে। এ সুবিধা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ কোম্পানিসহ ল্যাব সুবিধা আছেÑএমন প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীদের জনস্বার্থে পিসিআর ল্যাব স্থাপেনের উদ্যোগের আহ্বান জানাচ্ছি।’

ভাইরাসের বিস্তার রোধে পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে কাদের বলেন, ‘আমাদের এখন বেশি প্রয়োজন রোগী চিহ্নিত করা এবং তাদের আইসোলেট করা। পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা বৃদ্ধি করা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এখনও রোগীরা হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে করতে পথিমধ্যে প্রাণ হারাচ্ছেন। আমি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয় বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

‘বিভিন্ন গণমাধ্যম ও গবেষণায় রিপোর্ট এসেছে, অনেক আক্রান্ত রোগী বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে। যারা বাসাবাড়িতে থাকছেন, তাদের চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র পেতে টেলিমেডিসিন সেবা তথা হটলাইন সেবা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এই মহামারির মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংকটের এ সময় দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। আমি এই কঠিন সময়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’