২০২১-২২ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ

সাময়িক হিসাবের তুলনায় কমল মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এতে দেখা যাচ্ছে, সাময়িক হিসাবের তুলনায় চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক ২৫ শতাংশ, চূড়ান্ত হিসাবে যা সাত দশমিক এক শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ৮২৪ ডলার, যা চূড়ান্ত হিসাবে দুই হাজার ৭৯৩ ডলারে নেমে এসেছে। বিবিএস গতকাল এ চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করে।

এর আগে গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় দুই হাজার ৮২৪ ডলার। সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে গতকালের প্রকাশিত তথ্যে, মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি দেশের উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে।

বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাময়িক হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি সাত লাখ ৯০ হাজার। চূড়ান্ত হিসাবে তা ১৭ কোটি ১৩ লাখে দাঁড়িয়েছে। সাময়িক হিসাবে টাকার অঙ্কে মোট জিডিপির পরিমাণ ছিল ৩৯ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। আর মার্কিন ডলারের হিসাবে এটি ছিল ৪৬৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। টাকার অঙ্কে চূড়ান্ত হিসাবে মোট জিডিপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ লাখ ৭১ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। আর মার্কিন ডলার হিসাবে তা দাঁড়িয়েছে ৪৬০ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময়হার ধরা হয়েছে ৮৬ টাকা। কারণ যে সময়ের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপি হিসাব করা হয়েছে, তখন বিনিময় হার এমনই ছিল। একদিকে মোট জিডিপির আকার হ্রাস, অন্যদিকে চূড়ান্ত হিসাবে মোট জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ বেড়ে যাওয়ায় সাময়িক হিসাবের তুলনায় চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু জিডিপি হ্রাস পেয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ দুই হাজার ৬৮৭ ডলার, যা সাময়িক হিসাবে ছিল দুই হাজার ৭২৩ ডলার। একই পরিস্থিতি দেখা গেছে মাথাপিছু জিএনআই বা মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রেও। চূড়ান্ত হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৯৩ ডলার, যা সাময়িক হিসাবে ছিল দুই হাজার ৮২৪ ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে গত বছরের ৩০ জুন। সাত মাসের বেশি সময় পার হওয়ার পর রোববার জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ ওই অর্থবছরের অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করল পরিসংখ্যান ব্যুরো।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। সব মিলিয়েই জিডিপি প্রবৃদ্ধি খানিকটা কমেছে। এর ফলে মাথাপিছু আয়ও ৩১ ডলার কমে গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার।

বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই প্রবৃদ্ধি ‘খুবই ভালো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭ দশমিক ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।’

করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের সাত শতাংশের মতো জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থনীতিবিদসহ বিশ্লেষকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক সংশয়। সেই সংশয়ের মধ্যেই সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ওই অর্থবছরই সোয়া সাত শতাংশ হয়েছিল।

তবে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ঋণ অনুমোদনের পর এ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির হিসাবে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ নাগাদ জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে। জিডিপি যে কমবে, সে ইঙ্গিত এর আগে বিশ্বব্যাংকও পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি আবার আগের ধারায় ফিরবে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ।