দীর্ঘ মেয়াদে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশের সব নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও গুণগত শিক্ষার নিশ্চয়তা। এর পাশাপাশি বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক, শিশু, নারীসহ সমাজের সব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ স্বল্প পরিসরে হলেও একটি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালু করেছে। কিন্তু এ কার্যক্রম নানা ধরনের দোষে দুষ্ট। বিশেষ করে এটির সুবিধা বিতরণে নানা অনিয়ম ও স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ শুরু থেকেই রয়েছে। একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রীয় সব কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কাজেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সিপিডির সংলাপে বক্তারা: স্বচ্ছতার অভাবে সামাজিক নিরাপত্তার অপব্যবহার হচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকা, সমন্বয়ের অভাব, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর অপব্যবহার হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, জনপ্রতিনিধিরা সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সুবিধা বিতরণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এমনকি যারা এই সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের সুবিধা পেতে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ঘুষ দিতে হচ্ছে। আর অনেক সচ্ছল ব্যক্তিও এ সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছেন প্রভাব খাটিয়ে। ফলে প্রকৃতপক্ষে যারা সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের হকদার, তারা বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে একটি আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কাজেই আধুনিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চালু করার জন্য এ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর এ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে নাগরিকদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সুবিধার অটোমেশন নিশ্চিত করা। এছাড়া উপকারভোগীদের বাছাই কার্যক্রমও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্যকে কাজে লাগানো যেতে পারে, কেননা সেখানে সব নাগরিকের তথ্যের ডেটাবেজ রয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজকে জনশুমারির তথ্যের সঙ্গে একটি ইন্টারফেস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উভয় তথ্য যাচাই করা যায়।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিকদের জন্য কোনো খয়রাতি কর্মসূচি নয়। বরং এ সুবিধা পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। কারণ নাগরিকদের করের অর্থেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। সেখানে সরকার কেবল ব্যবস্থাপকের ভূমিকা পালন করে মাত্র। কাজেই সরকার কতটা ভালো ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে নাগরিকরা কতটা সুলভে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেবায় অভিগম্যতা পাচ্ছেন তার ওপর। কাজেই সরকার একটি ভালো ব্যবস্থাপক হওয়ার চেষ্টা করার তাগিদ থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।