Print Date & Time : 3 August 2025 Sunday 2:10 pm

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুণগত ব্যয় নিশ্চিত করুন

দেশে এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, ন্যূনতম সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত। তাদের কথা চিন্তা করে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু এ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় না হওয়ায় প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিতরা তার সুফল পাচ্ছে না। বিত্তশালীরা সিংহভাগ সুবিধা পাচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক। জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাবশালীদের দ্বারাও এ অর্থ নয়-ছয় হচ্ছে। প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এ অর্থ ব্যয় না হলে পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতি হবে না বলে আশঙ্কা অনেকের।

‘সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ ব্যয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি’ শিরোনামে গতকাল দৈনিক শেয়ার বিজে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে বলা হয়, সামাজিক নিরাপত্তায় মোট বরাদ্দের ৩৫ দশমিক তিন শতাংশই ব্যয় হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বাবদ। অথচ এটি সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। মূলত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বেশি দেখাতে এমন কৌশল নেওয়া হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের মত। সরকারের এ ধরনের কৌশল গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করি।

রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি বরাদ্দ এবং অর্থ অপচয়ের ব্যাপার তো রয়েছেন। দেখা যায়, অনেক প্রকল্পই যে উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়, তা সফল হয় না। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবন সচল রাখতে ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএসএস) গ্রহণ করা হয়। এতে জিডিপির তিন শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। অথচ পেনশন বাদ দিলে সে ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপির মাত্র দেড় শতাংশ। আবার এ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থই প্রকৃতপক্ষে যাদের পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য যে পরিকল্পনা তা সঠিক পথে নেই বললেই চলে।

সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরোত্তর সুবিধাদি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা। যেসব কাজে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তারও অনেকগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সুবিধাভোগী বাছাই করার প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিতরণ করা সুবিধার ৭৫ শতাংশই পেয়েছে সচ্ছলরা, যা হতাশাজনক। প্রকৃত পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়ের সুফল পাইয়ে দিতে সরকার কার্যকর পন্থা গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করি।