Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 10:17 am

সামাজিক নিরাপত্তা খাত সংস্কার হলে মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে: এডিবি

শেয়ার বিজ ডেস্ক:এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে সহযোগিতা করে থাকে। এ সহায়তা কীভাবে দেশে দেশে টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করছে, তা নিয়ে সম্প্রতি অংশীদারি প্রতিবেদন ২০২২ প্রণয়ন করেছে এডিবি। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে দুটি অধ্যায় আছে। 

অংশীদারি প্রতিবেদন ২০২২ অনুযায়ী, কভিডের সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক নানা ব্যবস্থা নিতে হয়; যার কারণে একই সঙ্গে সরবরাহ ও চাহিদা ব্যবস্থা বড় ধরনের ধাক্কা খায়। বিপুল জনগোষ্ঠী কাজ হারায়; ফলে তাদের আয় কমে যায়। খাদ্যস্বল্পতা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ জটিলতার কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত যুক্ত হলে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছিল, সেখান থেকে সহজেই ছিটকে পড়তে পারে। বাংলাদেশে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়; যাতে দরিদ্র ও অরক্ষিত মানুষ বিশেষভাবে আক্রান্ত হয়।

এডিবি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দরকার।

২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার বিকাশে মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করে। সরকার তখন মানুষের জীবনচক্রভিত্তিক অধিকতর সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন করে। এতে যে অর্থ ব্যয়  হচ্ছে, তা থেকে আরও ভালো ফল পেতে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার চেষ্টা করছে।

এই উদ্যোগ মূলত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির তিনটি খাতে নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়: কর্মসূচির আওতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা ও জীবনচক্রের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত চাহিদার বিষয়টি আরও ভালোভাবে আমলে নেয়া।

আরও বেশিসংখ্যক প্রবীণ নাগরিক, বিধবা ও প্রান্তিক নারীকে প্রাসঙ্গিক ভাতা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়, সে জন্য এই কর্মসূচির আওতায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা নির্বিঘœ ও দ্রুততর করতে এমআইএস তৈরি ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হয়। এ লক্ষ্যে সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।

ব্যাংকের আওতার বাইরে থাকা মানুষদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে এমএফএস সেবার উন্নয়ন ও এমএফএস হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সহজ করতে। এতে আর্থিক সেবা জনগণের হাতের নাগালে আসবে।

মানুষের জীবনচক্রে একেক সময় একেক চাহিদা সৃষ্টি হয়। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে, সরকার যেন এসব চাহিদা আমলে নিতে পারে, সে জন্য তাকে সহায়তা করা। ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের প্রস্তুতি জোরদার করতেও এটি সহযোগিতা করবে, বিশেষ করে মহামারির ক্ষেত্রে। এছাড়া নগর দরিদ্রদের জন্য বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটানোও এর লক্ষ্য।

দেশে সামাজিক নিরাপত্তা থাকলে মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এডিবির সামাজিক নিরাপত্তা খাত বিশেষজ্ঞ হিরোকো উচিমুরা শিরোইশি বলেন, জরুরি অবস্থা, বিপর্যয়Ñএসব থেকে মানুষ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে যদি তাদের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য, সামাজিক ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা মেটানোর ব্যবস্থা থাকে।

চলতি বছর এসব কর্মসূচি শেষ হলে দেশের ২৬০টি উপজেলার সুরক্ষা পাওয়ার যোগ্য সব মানুষ অন্তত দুটি ভাতা কর্মসূচির আওতায় চলে আসবেন, ২০২০ সালের তুলনায় যার সংখ্যা হবে দ্বিগুণের বেশি। বিশেষ করে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরাই এসব কর্মসূচির আওতায় আসবে, বিশেষ করে অরক্ষিত জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও নারীরা। এমএফএসের ক্ষেত্রে সরকার যে পরিবর্তন নিয়ে আসছে, তাতে মানুষের পক্ষে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসা সহজ হবে।