Print Date & Time : 5 September 2025 Friday 8:39 am

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও পরিধি বাড়াতে যাচ্ছে সরকার, যার আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা অন্তত ১০০ টাকা বাড়ানোর পাশাপাশি সুবিধাভোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এর সুফল যেন টার্গেটগ্রুপ পায়, সেটিও নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। দেশব্যাপী বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা আত্মসাৎ হওয়ার খবর কমবেশি আমরা জানি। দেখা গেছে, খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) তালিকায় সচ্ছল পরিবারের সদস্য, নিজের আত্মীয়সহ অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে জনপ্রতিনিধিদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে। এই জনপ্রতিনিধিরা সচ্ছলদের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন ওয়ার্ডের ওএমএস তালিকার ভোক্তার কার্ডে। তাদের কেউ ব্যবসায়ী, অনেকের ছেলে প্রবাসে থাকেন। তারপরও হতদরিদ্র ও ভিক্ষুকদের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি ওএমএস চালের ভোক্তা তালিকায় রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ের নেতা, স্থানীয় চেম্বারের পরিচালক ও এফবিসিসিআই সদস্যও ছিলেন!

দুর্যোগকালে ত্রাণ বিতরণসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নানা সুবিধা বিতরণে এ ধরনের অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। এ ধরনের অনিয়ম রুখতে সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা বিতরণে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। এর আগে কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তেমনিভাবে সামাজিক নিরাপত্তার অন্যান্য সুবিধা বিতরণেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সুবিধাভোগী নির্বাচন প্রধান কাজ। মূলত দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধার আওতায় আনা হয়। কাজেই এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বাছাই করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ। ওই জরিপের আওতা বাড়িয়ে প্রত্যেক পরিবারকে জরিপের আওতায় এনে তাদের অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থার হালনাগাদ তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেই তথ্যভাণ্ডারের সাহায্যে সুবিধাভোগী নির্বাচন করে সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে প্রণোদনার অর্থ পাঠানো যেতে পারে। সাধারণত বস্তুগত কোনো উপকরণ, যেমন চাল, ডাল প্রভৃতি বিতরণ করার ক্ষেত্রে অনিয়মের ঝুঁকি থেকে যায়। তাই সুবিধাভোগীর তালিকা অনুযায়ী তাদের ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠিয়ে দিলে তারা নিজেদের প্রয়োজনমতো উপকরণ কিনে নিতে পারেন। এতে অনিয়ম যেমন রোধ হবে, তেমনি সুবিধাভোগীরাও বাড়তি ফল পাবেন।

আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বহির্বিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে কর্মসূচির বৃদ্ধিতে বিক্ষিপ্তভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় যাদের ভাতা পাওয়া উচিত, তারা যেন কোনো কারসাজিতে বাদ না পড়ে। কোনোভাবেই শ্রেণিগত অসাম্য কিংবা অঞ্চল বৈষম্য যেন না হয়। সামাজিক ন্যায়বিচার ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুফল পাবে না হতদরিদ্র মানুষ। যারা জ্ঞাতসারে হতদরিদ্রদের বঞ্চিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।