Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 6:58 pm

সারা দিন আগুনে পুড়েছে গুলশানের ডিসিসি মার্কেট: নাশকতার অভিযোগ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার রাত আড়াইটার দিকে গুলশান-১ নম্বরে ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। এ আগুনে মার্কেটটি পুড়েছে মঙ্গলবার সারা দিন। এতে মার্কেটের কঁাঁচাবাজারের অংশসহ দ্বিতীয়তলার দুটি অংশ ধসে পড়েছে। আগুনে ব্যবসায়ীদের প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। আগুন নেভাতে গতকাল সারা দিন ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিটসহ নৌবাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন। সবশেষ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যার পর।

এদিকে ব্যবসায়ীরা এ আগুনকে নাশকতা বলে অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, মার্কেট থেকে তাদের উচ্ছেদ করতেই পরিকল্পিতভাবে এ আগুন দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং একটি গ্রুপ অব কোম্পানিকে এ নাশকতার জন্য দায়ী করেছেন তারা।

রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস বা সরকারি কোনো সংস্থা। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বর্ণনা করে পাকা মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএম তালাল রিজভী জানান, রাত ২টায় হয়তো আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। রাত আড়াইটায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় খবর পেয়ে অনেকেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটের স্বল্পতার কারণে প্রথম থেকে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে আগুন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাশাপাশি দুই মার্কেটই আগুনে পুড়তে শুরু করে। যখন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট বাড়ানো হয়, তখন ভোর ৪টা বেজে গিয়েছিল। আগে আরও ইউনিট বাড়ালে হয়তো এত বেশি ক্ষতি হতো না।

গুলশান-১ নম্বরে সিটি করপোরেশনের প্রায় সাত বিঘা জমির ওপর নির্মিত রাজধানীর এ উন্নতম বিপণিবিতান। এখানে কাঁচা ও পাকা মার্কেট মিলিয়ে দুই অংশে দোকান রয়েছে প্রায় ৬০০। ২০০৩ সালে ওই মার্কেটের জায়গায় পিপিপির আওতায় ১৮ তলা গুলশান ট্রেড সেন্টার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়। তা নিয়েই বর্তমানে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের জটিলতা চলছে। এতে বর্তমানে দোকান মালিক সমিতি মামলা করলে ঠিকাদার কোম্পানি সেখানে আর ভবন তুলতে পারেনি। এসব তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের ডিসিসি কঁাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ বলেন, এসব চুক্তির মধ্যে এখানকার দোকান মালিকদের পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এ নিয়ে দোকান মালিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একরকম বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। বহুবার তাদের উচ্ছেদের জন্য হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে। নিশ্চিত নাশকতা করা হয়েছে, তাই আগুন লাগার আধা ঘণ্টার মধ্যে ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। সাধারণত আগুন লাগলে এভাবে বিল্ডিং ধসে পড়ে না। তিনি বলেন, এসব কারণে সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং মেট্রো গ্রুপ এ নাশকতা চালিয়েছে।

এদিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিকদের জানান, ডিসিসি মার্কেটের আগুন কোনো নাশকতা নয়, এটি দুর্ঘটনা। বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেন, ‘পানি স্বল্পতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হচ্ছে। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এটা নাশকতা কি না, তা তদন্ত করা হবে। কমিটি গঠন করা হবে।

রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত মার্কেটের আগুন কিভাবে লেগেছে, সে বিষয়ে গতকাল নিশ্চিত কিছু জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। এ বাহিনীর পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, একটা বিল্ডিং কলাপস করেছে। কোনো ক্যাজুয়ালটি হয়নি। এখানে কমবাস্টেবল ও ফ্লেইম্লে লিকুইড ছড়িয়ে আছে। ডেঞ্জারাস জিনিসপত্র আছে।

এদিকে গতকাল আগুনের সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ফায়ার সার্ভিস তেমনভাবে কাজ করছে না। দোতলা একটি বিল্ডিংয়ের ওপর এই মার্কেট, চারপাশে খোলা অথচ ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে ক্ষোভ জানান তারা। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ তোলেন মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বহু দোকানমালিক।

কাপড় ব্যবসায়ী তালেব আলী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ২০-২১টি ইউনিট কাজ করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একসঙ্গে দুটি বা তিনটির বেশি কাজ করেনি। একটি ইউনিট ১০ মিনিটের জন্য পানি দিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার ১০ মিনিট পর পানি নিয়ে আসছে। এ সময়ের মধ্যে আগুন আবার ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যবসায়ীরা ফায়ার সার্ভিসের কাজে ধীরগতির অভিযোগ আনলেও অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস বলেছে, মার্কেটে অগ্নি নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানানো হয়, যে কোনো ভবনে আগুন লাগতে পারে। কিন্তু আগুন নেভানোর সক্ষমতা, পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা ও আগুন নেভানোর যন্ত্র থাকতে হবে।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিষ বর্ধনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যসচিব হচ্ছেন ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মাসুদুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন তেজগাঁও স্টেশনের সালাহ উদ্দিন, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম ও তানহারুল ইসলাম।

অন্যদিকে মার্কেটে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। লিখিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই জানায়, ‘ডিসিসিআই মনে করে এ ধরনের ঘটনা একই সঙ্গে দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। এ ঘটনায় শতাধিক দোকান পুড়ে গেছে এবং ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ঢাকা চেম্বার ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ীদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে ও দুঃখ প্রকাশ করছে।’

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে আরো দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বেলা ১২টার দিকে ফিরোজশাহ কলোনিতে একটি আটতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি আধঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া গাজীপুরের কুনিয়া এলাকার সকালে জারা ইয়ার্ন সল্যুশন নামের ঝুট থেকে তুলা তৈরির কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের দমকলকর্মীরা এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।